সাভারে দুটি চলন্ত বাসে ডাকাতি

সাভারে গত দুই মাসে তৃতীয়বারের মতো একদিনে দুটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ দুটি ঘটনায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট হয়েছে বলে যাত্রীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।  তবে এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ না দেওয়ায় লুটের মালামালের হিসাব জানাতে পারেনি পুলিশ। 

এ ঘটনার পর মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীদের মাঝে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। দিনের বেলায় যাত্রীবাহী বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। যাত্রীরা মহাসড়কে পুলিশের টহল জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন। 

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সিএন্ডবি এলাকায় চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনায় জাবি শিক্ষার্থীরা ডাকাতদের কবলে পড়ে। 

প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টিউশন করিয়ে রেডিও কলোনি থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে সিএন্ডবি এর আগে রাজধানী বাসে  হঠাৎ করে তিনজন ছিনতাইকারী ওঠে। তিনজনের কাছেই চাকু ছিল। একজন ড্রাইভারকে চাকু দেখিয়ে বাস থামায়, বাকি দুইজন যাত্রীদের চাকু দেখিয়ে ভয় দেখাতে থাকে। তাদের মুখ সম্পূর্ণ খোলা ছিল। আমার পাশে বসা মহিলার গলা থেকে সোনার চেইন নিয়ে যায়। পিছনে বসা আরেকজন মহিলার গলার চেন কেড়ে নেয় এবং একজনের পকেট থেকে (তার বক্তব্য অনুযায়ী) ২০ হাজার টাকা নেয়। দিনের বেলায় চলন্ত বাস ভর্তি লোকজনের মধ্যে এভাবে লুট হয়। 

তিনি বলেন, আমরা কিভাবে যাতায়াত করব? আমাদের তো দিনের বেলায়ও কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়। 

ছাত্ররা জানান,  মহাসড়কের সিএন্ডবিতে রাজধানী পরিবহণে তিন ডাকাত উঠে ধারালো ছুরির ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থেকে নগদ টাকা পয়সা ও স্বর্ণলংকার লুটে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশকে এ বিষয়ে জানানো হয়।

অপরদিকে সাভার ব্যাংক টাউন এলাকায় ছিনতাই হওয়া একটি বাসের যাত্রীরা জানায়, শুক্রবার ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় সাভার পরিবহণ নামের একটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে কয়েকজন ডাকাত ধারালো ছুরি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বত্র কেড়ে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, যাত্রীবাহী বাসে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি সময় যাত্রীদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা,  স্বর্ণালংকার সহ কয়েক লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। 

যাত্রীরা  জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংকটাউন ব্রিজের উপরে সাভার পরিবহণের যাত্রীবাহী বাস নং (ঢাকা মেট্রা-১৩-০৭০৬) ডাকাতদের কবলে পড়ে। লুটের পর ডাকাতরা বাসের নাম্বার প্লেটটি খুলে মহাসড়কে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রীদের একজন সাভার প্রেস ক্লাবের সদস্য তায়েফুর রহমান জানান, আমি সাভার পরিবহণের একটি বাসে করে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। বাসটি ব্যাংক টাউন বাসস্ট্যান্ডে থামানো হলে তিনজন যুবক গাড়িতে ওঠে। পরে গাড়িটি ব্যাংক টাউন ব্রিজের উপর পৌঁছলে মহিলা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, গলার চেইন, কানের দুলসহ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেমে যায়। 

তিনি বলেন, ছিনতাইকারীরা আমার স্ত্রীর গলায় থাকা লক্ষাধিক টাকা মূল্যের লকেটসহ এক ভরি ওজনের সোনার চেইন নিয়ে গেছে। এ সময় অন্য নারী যাত্রীদের কাছ থেকে একইভাবে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের পর বাসটি রাজধানীর কল্যাণপুরে গিয়ে বাস ফেলে রেখে যায়। বাসের চালকও সহকারি ছিনতাইকারীদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলে ছিনতাই কারীদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে। 

স্থানীয় এক যাত্রী বায়েজিদ বলেন,  এর আগেও সাভার থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে অহরহ।  ছাত্র-ছাত্রীরা ছিনতাইয়ের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি বাস আটক করা হয়। কিন্তু ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ  নির্বিকার। 

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুয়েল মিঞা বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে আমাদের সার্বক্ষণিক টহল টিম রয়েছে। ঘটনার সময়ও গেন্ডা এলাকায় আমাদের সদস্যরা কাজ করছিলো। সাভার পরিবহণের বাসে ডাকাতির ঘটনা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। 

তিনি বলেন, তাদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনা রুখতে কয়েকটি অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সিভিল পোশাকে ডিবি পুলিশকে মোতায়েন করা হচ্ছে।

সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির যুগান্তরকে জানান, আগের দুটি বাসের যাত্রীদের ছিনতাই ঘটনায় ৫জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে আজকের দুটি ঘটনায় কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত  কোনো মামলা রেকর্ড করা হয়নি। আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিবো।

এর আগে সাভারের ব্যাংক টাউন ও সিএন্ডবি এলাকায় বেশ কয়েকটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।