
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম
পুলিশের বুলেটেই স্বপ্নভঙ্গ পুলিশ হতে চাওয়া নবাবের

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম

মেহেদী হাসান নবাব
আরও পড়ুন
নেত্রকোনার টগবগে যুবক মেহেদী হাসান নবাব। জেলা শহরের একটি কলেজে অনার্সে অধ্যয়ন করতেন। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশের চাকরি করবেন। কিন্তু জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেই পুলিশের বুলেটেই স্বপ্ন ভেঙে গেল নবাবের।
২৪-এর জুলাই আন্দোলনে পুলিশের বুলেট কেড়ে নিয়েছে তার একটি চোখের দৃষ্টি। টাকার অভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় আরেক চোখের দৃষ্টিও নিভে যাওয়ার পথে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের মৈধাম গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান নবাব। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। চানগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন নবাব। জুলাই আন্দোলনে তার ভূমিকাও ছিল সক্রিয়। এই আন্দোলনে একটি চোখ হারিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে চিকিৎসার জন্য ব্যয় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। এ কারণে নিজেকে এখন পরিবারের বোঝাও মনে করছেন তিনি।
জানতে চাইলে মেহেদী হাসান নবাব বলেন, স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশের চাকরি নেবো। কিন্তু পুলিশের বুলেট আমার সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসার অভাবে আরেকটি চোখও এখন নষ্টের পথে। জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছি। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলাম। সেগুলো খরচ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পরিবার ৬ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছে। কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছে না। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
নবাবের বাবা খোকন মিয়া বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনে গিয়ে একটি চোখ হারিয়েছে। আরেকটি চোখ নষ্ট হচ্ছে। টাকার জন্য ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার যেন আমার ছেলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক সাঈদ বিন ফজল জানান, জুলাই আন্দোলনে জেলার মদন উপজেলার প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৩ জনের নাম সরকারি তালিকায় এসেছে এবং ২৩ জনের গ্যাজেট প্রকাশ হয়েছে। আহত মেহেদী হাসান নবাবের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। এখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে হবে। এর জন্য আমরা সব জায়গায় যোগাযোগ করছি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা।
সেই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে মদন উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে মদন সরকারি কলেজ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। একই সঙ্গে পুলিশও অবস্থান নেয় সেখানে।
সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের দিকে আসতে থাকে। পরে পুলিশ ডাক বাংলো মোড়ে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পাবলিক হলের দিকে রওনা হয়।
একই সময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠন। দুটি মিছিল উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে মুখোমুখি হলে প্রশাসন মিছিল দুটিকে ছত্রভঙ্গ করে আলাদা করে দেয়।
পরে শিক্ষার্থীরা শহীদ আব্দুল কদ্দুছ মগড়া সেতুর পূর্ব পাড়ে অবস্থান নেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে যোগ দেয়।
এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন মেহেদী হাসান নবাব। এছাড়া সেই সময় আরও ১২-১৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত মানুষ আহত হন।