
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর সন্তান প্রসব

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

কুষ্টিয়া শহরে ধর্ষণের শিকার ১৩ বছর বয়সি এক কিশোরী জন্ম দিয়েছেন একটি পুত্রসন্তান।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নবজাতক সন্তানটির জন্ম হয়। এ ঘটনায় ধর্ষক উদয় কর্মকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে রয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তার সহযোগিতায় এ ঘটনা সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ মামলার আসামি ধর্ষক উদয় বাদীর আত্মীয়। তারা কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় একসঙ্গে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পেটে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ধর্ষণের শিকার কিশোরী। এরপর ওই দিনই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার কিশোরীর বাবা কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন- উদয় কর্মকার (২৬) আমার আত্মীয়। অনুমানিক ১০ মাস আগে থেকে আমি, আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও আসামিকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলাম। ২০২৪ সালের ২ মে রাত অনুমানিক দেড়টার দিকে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আসামি আমার মেয়ের কক্ষে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। ৭ এপ্রিল দুপুরে আমার মেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে পুত্রসন্তান জন্ম দেন।
তখন সে তার মায়ের কাছে জানায়, উদয় ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। ভয়ে আমার মেয়ে কাউকে কিছু বলেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা বলেন, আসামি আত্মীয়ের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছে।
এ মামলায় পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা সমঝোতায় সহযোগিতা করছেন। এজন্য টাকাও নিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগ অস্বীকার করে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নার্গিস খাতুন বলেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী মেয়েটি পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছে। পরের দিন এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই দিনই মামলার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর জবানবন্দি ও রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
তিনি বলেন, সমঝোতায় সহযোগিতা ও টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, অপরাধীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জেসমিন পারভিন বলেন, কিশোরী ৮ এপ্রিল বেলা ১২টা ১০ মিনিটের দিকে হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এরপর দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে নরমাল ডেলিভারিতে পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। এরপর আনুমানিক বিকালের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তারা চলে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বলেন, প্রথমে সবকিছু গোপন করে ধর্ষণের শিকার কিশোরী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপর নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান জন্ম দেয়। ওই দিনই হাসপাতাল থেকে তারা পালিয়ে যায়। এরপর এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে একই দিন তাকে আবার গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার বাদী ও কিশোরীর বাবা বলেন, এটা একটা পারিবারিক ব্যাপার। আমরা সমাধান করে নিচ্ছি। নিজেদের ব্যাপার এজন্য পুলিশের মাধ্যমে সমাধান করে নিচ্ছি। সমাধানের ব্যাপারে পুলিশ সহযোগিতা করছে। এটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।