
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
ভারতের মিডিয়ায় অপপ্রচারকারী সায়ন ঘোষ কেন ঘন ঘন বাংলাদেশে আসেন

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলছে বলে ভারতীয় টকশোতে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। সেসব টকশোতে বাংলাদেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো নিরাপত্তা পাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় নাগরিক আলোচিত সায়ন ঘোষ। তিনি ঘন ঘন বাংলাদেশে আসেন।
বুধবার সকালে বাংলাদেশে ৩ দিন ভ্রমণ শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা সীমান্তে পুলিশ চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যান। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
সায়ন ঘোষ (২৬) ভারতের কলকাতার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেলঘরিয়া থানা শহরের সুকান্ত ঘোষের ছেলে।
দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানান, গত ২৩ নভেম্বর সায়ন ঘোষ টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। গত ৩০ নভেম্বর তিনি দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন শেষে সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেদে প্রবেশ করেন। এছাড়া তিনি ২৭ মার্চ একই ভিসায় বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ২৯ মার্চ ভারতে গমন করেন।
এরপর তিনি ৭ এপ্রিল বেনাপোল বন্দর দিয়ে আবারও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন সায়ন। ৩ দিন ভ্রমণ শেষে শুক্রবার সকালে দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত প্রবেশ করেছেন।
এ বিষয়ে দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের এএসআই তারেক জানান, নভেম্বর মাসে সায়ন ঘোষ ৮ দিন বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। এরপর তিনি ২৭ মার্চে এসে ৩ দিন ও ৭ এপ্রিলে এসে ৩ তিন দিন বাংলাদেশে ভ্রমণ করে ভারত চলে গেছেন।
জানা গেছে, কলকাতাসহ কয়েকটি টিভি চ্যানেল মিডিয়া টকশোতে অংশ নেয় সয়ন ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন গত ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের ঢাকার জুরাইনের বাগানবাড়ি অবস্থান করছিলেন। এ সময় তাকে হিন্দু বলে স্থানীয়রা পাথর ও ছুরি দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে।
তিনি আরও বলেন, আমার পকেট থেকে নগদ টাকা ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তিনি থানায় গেলে অভিযোগ নেয়নি। বিভিন্ন থানায় থানায় ঘুরে শেষে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপদ নয়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন কোনো নিরাপত্তা দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন টেলিভিশন চ্যানেল মিডিয়ায়।
এ ঘটনার পর ২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিলে দুই মাসে সায়ন ঘোষ দুইবার তিন দিন করে আবার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশিসহ জনসাধারণের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম নেয়।
শুক্রবার তিনি দর্শনা বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ২৯ নভেম্বর আমাকে হিন্দু বলে মারধর করে রক্তাক্ত যখন করা হয়। আমি পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাই আমি ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় টকশোতে অংশ নিই। টকশোতে আমার এই ঘটনার বর্ণনা করার পর কলকাতায় ভারতীয় বাংলাদেশি হাইকমিশনারের দপ্তরে একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো সুরাহা পাইনি।
এ ঘটনার পর তিনি দুইবার বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন, তার কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দুই মাসে দুবার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছি। এখন বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি নাই। কেউ তাকে কোনো হয়রানি করেনি বলে জানিয়েছেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব পলাশ আহমেদ উপস্থিত থেকে বলেন, সায়ন ঘোষ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় নিরাপদ নয় এবং আমাদের বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে কটাক্ষ করে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করলেন। তারপরও তিনি দুবার কেন বাংলাদেশে এসে ভ্রমণ করে ঘুরে গেলেন। এর মধ্যে এসে তিনি থানাতেও কোনো অভিযোগ করেনি। বাংলাদেশে কোনো হিন্দু নির্যাতন বা নিপীড়নের শিকার হয়নি। সয়ন ঘোষ হয়তো কোনো ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অবস্থা এত খারাপ বলে প্রচার করলেন। তারপরও তিনি গত দুই মাসে দুইবার ৩ দিন করে বাংলাদেশে আসলেন- এটা গভীর ষড়যন্ত্রের সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করছি।