
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২০ পিএম
সওজের জায়গা দখলে নিয়ে আ.লীগ নেতার ভবন নির্মাণ

কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম
-67f7e4e9383ef.jpg)
আরও পড়ুন
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) অধিগ্রহণকৃত কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন লেমশিখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেজামুল হক। ২০১৫ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার শুরুতেই জায়গাটি দখল করেন তিনি।
এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাধারণ সম্পাদকের পদটি ছিল তার জন্য মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা ও সরকারি জায়গা দখল করার একমাত্র হাতিয়ার।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুতুবদিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে লেমশিখালী ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার। বাজারে আজম সড়ক নির্মাণ করতে সওজ কর্তৃপক্ষ বিএস ১৫১৪৩ দাগের জায়গা অধিগ্রহণ করেন।
অধিগ্রহণকৃত জায়গায় সামনে টিনশেড এবং তার পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন তিনতলা বিশিষ্ট সবুজ রঙয়ের একটি ভবন। ওই ভবনের নিচ তলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা নেজামুল হককে মোটা অংকের সালামি দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি মাসে তাদের কাছ থেকে ভাড়াও আদায় করেন তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সওজের ওই জায়গা অধিগ্রহণ করার আগে থেকে স্থানীয় কিছু মানুষ টিনশেড দোকান করতেন। নেজামুল হক ২০১৫ সালে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর ওই জায়গা থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেন এবং তার বাহিনী দিয়ে রাতের আঁধারে দোকানের সব মালামাল লুট করে নিয়ে যান। পরে ওই জায়গা তিনি জবর দখল করেন।
সে সময়ে তার এসব অপকর্মের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে বিএনপি-জামায়াতের তকমা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করতেন।
তারা আরো বলেন, বিগত সরকারের পতন হলেও অদৃশ্য কারণে লেমশিখালীতে নেজামুল হকের ক্ষমতা এখনও চলমান রয়েছে।
ভুক্তভোগী আকতার হোছাইন নামে এক ব্যক্তি বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করার আগে আমরা এ জায়গার পৈতৃক মালিক ছিলাম। অধিগ্রহণ করা জায়গা সরকার চাইলে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে ওই জায়গায় অস্থায়ী টিনশেডের একটি দোকানে ফার্মেসি দিয়ে এলাকার একমাত্র পল্লী চিকিৎসক হিসেবে মানুষের চিকিৎসা দিতাম। কিন্তু ২০১৫ সালে আমাকে রাজনৈতিক মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেন তিনি। পরে সবকয়টি দোকানের মালামাল লুটপাট করে ওই জায়গা তার কর্মীদের দিয়ে জবর দখল করেন। সে সময়ে ক্ষমতা এবং টাকার জোরে তিনি ওই সরকারি জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।
লেমশিখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেজামুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছে। তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সওজের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসককে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ নির্ধারণপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
কুতুবদিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ সাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সওজের অধিগ্রহণ করা জায়গায় ভবন উচ্ছেদের বিষয়ে সওজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যাথোয়াইপ্রু মারমা যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। ইতোমধ্যে আদালতের একটা আদেশ পেয়েছি। সওজের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সময়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।