
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের একাংশের বিরুদ্ধে ফরম বিতরণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ফরম কিনতে গেলে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে সাধারণ অনেক আইনজীবীকেও লাঞ্ছিত করে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনায় সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেছেন, একটি পক্ষ নির্বাচন না করে সমিতি দখলের মাধ্যমে নেতৃত্ব কুক্ষিগত করতে চাইছে; যা জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ছাত্ররা গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিলেও এখানে একটি পক্ষ ভোটে জিততে পারবে না দেখে কেবল ব্যক্তি স্বার্থে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করছে।
বিএনপি-জামায়াতপন্থি উদারমনা আইনজীবীরা এ ধরনের দখলবাজির বিপক্ষে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে অপেশাদার বা নন-প্র্যাকটিশনার ৮৬৭ জন আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল ও ৮৩টি চেম্বারের বরাদ্দ বাতিল করেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভায় বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কমিটি সূত্র জানিয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফশিল অনুযায়ী আগামী ১৬ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে বার লাইব্রেরি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার দিন ধার্য ছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা মনোনয়ন ফরম কিনতে গেলে জাতীয়তাবাদী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মিছিলসহকারে এসে বাধা প্রদান করা হয়। মনোনয়ন ফরম কিনতে যাওয়া আইনজীবীদের ধাওয়া করে লাইব্রেরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় দুইপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন জাবেদ ও এজিএস প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী নমিনেশন ফরম তুলতে গেলে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মিছিলসহকারে গিয়ে তাদের বাধা প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগ দাখিল করেছি।
সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, কেবল আওয়ামীপন্থি নয়; এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন মনোনয়ন ফরম কিনলেও নির্বাচন কমিশনের সামনেই তার কাছ থেকে ফরম কেড়ে নেওয়া হয়। নজরুল ইসলাম নামে সাধারণ একজন আইনজীবীকেও নাজেহাল করা হয়েছে। আর আওয়ামী লীগপন্থিদের তো ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।
তবে বিএনপি-জামায়াতসহ ডানপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন ইউনাইটেড ল' ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের আহ্বায়ক আবদুস সাত্তার যুগান্তরকে বলেন, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় যেসব আইনজীবী লাঠিসোটা নিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের ওপর হামলা করেছিল, আইনজীবী আলিফ হত্যার ইন্ধনদাতা তাদের ওপর সাধারণ আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ। এ কারণে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা নির্ধারিত সময়ে ফরম কিনতে যাননি। তারা নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে অ্যাডহক কমিটির কাছে মিথ্যা অভিযোগ করতে গেছেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচন উপলক্ষে গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম দফায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিশন তফশিলও ঘোষণা করে; কিন্তু পরবর্তীতে ওই নির্বাচন কমিশন ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি এবং নির্বাচনি পরিবেশ না থাকার অভিযোগে একযোগে পদত্যাগ করে।
এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে অ্যাডভোকেট শামসুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জহুরুল আলম ও রফিক আহাম্মদকে সদস্য করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডহক কমিটি আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেয়। এ কমিটি পুনরায় তফশিল ঘোষণা করেছে। এবারও বাধায় আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
৮৬৭ জন আইনজীবীর সনদ বাতিল:
সমিতির গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারায় ডিফল্টার সদস্য, দীর্ঘদিন চেম্বারের বিদ্যুৎ বিল ও ভাড়া পরিশোধ না করা, বিভিন্ন চৌকিবারে মূল সদস্যপদ থাকা সত্ত্বেও সমিতির সদস্যপদ নিয়ে চেম্বার বরাদ্দ ও এমবি ফান্ডের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা, প্র্যাকটিসে না থাকাসহ নানা কারণে ৮৬৭ জনের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। অপেশাদারদের ১৭টি, চেম্বারের বিদ্যুৎ বিল, ভাড়া পরিশোধ না করায় ১৬টি, সমিতির চাঁদা পরিশোধ না করায় ২৩টি, চৌকিবারে সদস্যপদ রেখে সমিতিতেও সদস্য হয়ে চেম্বার বরাদ্দ ও এমবি ফান্ডের সুবিধা গ্রহণের কারণে ২৭টিসহ মোট ৮৩টি চেম্বারের বরাদ্দ বাতিল করা হয়। এ নিয়েও সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
তারা বলছেন, এগুলো করে আইনজীবী সমিতিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে।