
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৭ এএম
গুরুদাসপুরে নারী শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবন

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম

আরও পড়ুন
সারি সারি চুলায় জ্বলছে আগুন। ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে আকাশে। সেখানে কাজ করছেন নারীরা। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, কোনো উৎসবের প্রস্তুতি। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। এটি একদল পরিশ্রমী নারী শ্রমিকের দৈনন্দিন জীবনযাপনের চিত্র।
নাটোরের গুরুদাসপুরে মৌসুমি শ্রমিক হিসেব কাজ করতে আসেন আশপাশের জেলা
থাকা নারীরা। উপজেলার ধারাবারিষা, নয়াবাজার বিশ্বরোড, কাছিকাটা ও হাঁসমারী এলাকায় রসুন
উঠানোর কাজ করেন তারা। কাজ শেষে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী বসতি করেন
নারী শ্রমিকরা। দিনভর মাঠে কাজ করার পর ক্লান্ত নারী শ্রমিকরা মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায়
জড়ো হয়ে করেন রান্না। খাওয়া-দাওয়াও সারেন একসঙ্গে।
স্থানীয়রা জানান, নারী শ্রমিকরা মূলত তাড়াশ, খালখোলা, দবিরগঞ্জ, মান্নাননগর,
মহিষলুটি, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, চাটমোহর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন।
দিনে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা মাঠে কাজ করার পর তারা ফিরে যান তাদের অস্থায়ী আবাসে।
তিন থেকে চারশ টাকা মজুরিতে কাজ করেন তারা।
তাড়াশ থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী শ্রমিক সাহেলা, বেগম ও ইলা মিত্র
বলেন, ‘সারাদিন রোদে পুড়ে মাঠে কাজ করি। সন্ধ্যায় এসে রান্নার ব্যবস্থা করি। একসঙ্গে
খাই। তারপর খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়। কেউ আবার মাথার ওপর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে থাকেন।
কিন্তু পুরুষের তুলনায় নারীদের মজুরি কম। কম মজুরি দিয়ে কষ্টে সংসার চালাতে হয়।’
নারী শ্রমিক কুলসুম বলেন, ‘আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। অনেক সময় রাতের
বেলা ভয় লাগে। কারণ এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। এভাবেই স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতে
হয়।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সরেজমিন ওই সকল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ খোলা
আকাশের নিচে মশারি টানিয়ে, কেউবা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সারিবদ্ধ
রান্না করছেন নারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা জুলফিকার, আব্দুর রব ও রানা হোসেন বলেন, এ নারী শ্রমিকদের
অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। সংসার চালাতে তারা বছরের বেশিরভাগ সময়ই নিজ
গ্রাম ছেড়ে এ এলাকায় কাজ করতে আসেন। কিন্তু মহাসড়কের ধারে বসবাস করায় নিরাপত্তাহীনতায়
ভুগতে হয় তাদের। নেই টয়লেট। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও নেই।
আইনজীবী এসএম শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে
বাড়লেও তাদের শ্রমের প্রকৃত মূল্যায়ন আজও হয়নি। তারা অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও
সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা পান না। নেই সরকারি সহযোগিতা কিংবা শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি।
তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, ন্যায্য মজুরি ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, ‘গুরুদাসপুরে এ ধরণের নারী
শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাদের জীবনযাত্রা কষ্টকর। তবুও জীবন যুদ্ধে তারা থেমে
নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘গুরুদাসপুরে
মৌসুম ভিত্তিক যে সকল শ্রমিকরা কাজ করতে আসেন তাদের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর
রাখা হচ্ছে।’