
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ শিক্ষার্থীকে ২ ঘণ্টা আটকে রাখেন যুবদল নেতা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম

আরও পড়ুন
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ সদস্যকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে জীবননাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সরদার ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবদল নেতাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্ররা।
অভিযোগটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির জেলা শাখার সংগঠক মাহাবুব আলম জয়।
ছাত্রদের অবরুদ্ধের ঘটনার ২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থী এবং যুবদলের সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন সরদার ও তার লোকজনের কথোপকথন হচ্ছে। একপর্যায়ে আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থী মাহাবুব আলম জয়কে বলছেন, সাউন্ড করবি না, আমাকে চিনছ, তোর মতো পোলা আমি জন্ম দিছি বেটা। আমার কথা শোন, আমার ছেলে ভার্সিটিতে পড়ে। হাসপাতাল তোর বাপের, নেতা হইয়া গেছস। ১৬ বছর রাজনীতি আমি করেছি। আমি গোসাইরহাট উপজেলা যুবদলের সেক্রেটারি ও ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম ১২ বছর। পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক ছিলাম, কলেজের সেক্রেটারি ছিলাম। তোর মতো পোলাপানরে জন্ম দিছি বেটা। আমি বসছি পিছনের চেয়ারে, আর তুই সামনে বইয়া রইছস। তুই চিনস আমি কে?
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গণমাধ্যম ও স্থানীয় মাধ্যমে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম ও দুরবস্থার সম্পর্কে জানতে পেরে গত ১১ মার্চ দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে যান জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব ফারহানা জাহান দীপ্তি, সংগঠক মাহাবুব আলম (জয়), সদস্য আশরাফুল ইসলাম মাসুম ও রায়হান নামে এক শিক্ষার্থী।
পর্যবেক্ষণ করে অনিয়ম ও দুরবস্থার সত্যতা পাওয়ার পর বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান মিয়ার কক্ষে বিষয়টি অবহিত করতে যান শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সেই কক্ষে থাকা গোসাইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্লিনিক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সরদার, বিএনপি নেতা শিমুল সরদার ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শাহ আলম সরদারসহ ২০-৩০ জন লোক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির পাঁচ সদস্যকে দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় গায়ে হাত দিয়ে লাঞ্ছিত করেন, জীবননাশের হুমকি দেন ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন তাদের। এ ধরনের জনসেবামূলক কাজ করতে কোথাও যেন না যায়, এমন হুমকি দেওয়া হয় অভিযোগ ছাত্রদের। পরে অবরুদ্ধ রাখার খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানার পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী ছাত্র মাহাবুব আলম জয় ও ফয়সাল হোসেন বলেন, আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি হাসপাতালের পরিবেশ খুবই খারাপ, রোগীদের যে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেখানেই রোগীর পাশেই রাখা হয় ময়লা-আবর্জনা এবং চিকিৎসকও নেই। এছাড়া অন্যান্য বিষয় তো আছেই। তাই সেই বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. হাফিজুর রহমান স্যারের কাছে গেলে যুবদলের সাবেক নেতা আনোয়ার ও তার লোকজন আমাদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। হত্যার হুমকি দিয়ে ছাদে নিয়ে উলঙ্গ করে বেঁধে রাখবেন বলে হুমকি দেন তারা।
গোসাইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্লিনিক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ওরা অন্য উপজেলা থেকে এসে গোসাইরহাট উপজেলায় টিএসও ও অন্যান্য অফিসের মানুষকে জিম্মি করে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে টাকা-পয়সা দাবি করছিল। সেখান থেকে জনগণ মারার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখিনি। জনগণ অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। সেখান থেকে আমরা তাদের সেফ করেছি।
বিএনপি নেতা শিমুল সরদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।
গোসাইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাকসুদ আলম জানান, এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত কোনো বক্তব্য নেই। তবে অনলাইনে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে।
গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাফিজুর রহমান মিয়ার বক্তব্য নিতে গেলে রোগীর চাপের অজুহাতে ঘটনার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।