
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে ফটিকছড়ির ভূজপুর, ৬ মাসে ৯ খুন!

কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম (ফটিকছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫২ এএম

আরও পড়ুন
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর যেন এখন এক অপরাধের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে অপরাধমূলক নানা ঘটনা। খুন, ছিনতাই, মারামারি, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, অপহরণ, গাছ পাচার, পাহাড় নিধনসহ বিভিন্ন এলাকায় জমি দখল-বেদখলের হিড়িক পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে পুলিশ যেন নির্বিকার। ভূজপুর যেন এখন এক ধরনের মগের মুল্লুক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ছয় মাসে ভূজপুর থানা এলাকায় ৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ভূজপুর থানা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্তানের হাতে গত ৬ এপ্রিল (রোববার) জুলেখা খাতুন (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। এরপর গত ৩ এপ্রিল মাসুম (৩৩) নামে যুবক নিহত হয়েছেন।
একইভাবে ৩ এপ্রিল জঙ্গল হারুয়ালছড়ি গ্রামের সুরণ রায়ের ছেলে তর্ম রায় (১৩) বন্ধুদের দায়ের কোপে রক্তাক্ত হয়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে রাতেই মারা যায়।
এছাড়া গত ১৮ মার্চ শান্তিরহাটে আধিপত্য বিস্তার ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রমজান আলী (২২) নামে এক যুবদলকর্মী প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নিউ দাঁতমারা চা বাগানের ভেতরে নিখোঁজের দুইদিন পর অটোচালাক মো. বেলাল উদ্দিনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এছাড়া গত ১ ফেব্রুয়ারি দাঁতমারা ইউনিয়নে বড় বেতুয়া এলাকায় মো. শহীদ (৩২) নামে এক বিএনপিকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, ১২ জানুয়ারি হারুয়ালছড়িতে মা ও ছোট ভাইয়ের উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে আনিকা আকতার (১৮) নামে এক যুবতীকে হত্যা, এর তিনদিন আগে (৯ জানুয়ারি) বাগানবাজারে বালু উত্তোলনে বাঁধা দেওয়ার জেরে বৃদ্ধ কৃষক দুলায়েত হোসেন দুলালকে (৬৫) পিটিয়ে হত্যা ও গত বছরের ২৯ নভেম্বর দাঁতমারা ইউনিয়নে নিখোঁজের ১৩ দিন পর পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে তাবাচ্চুম (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ভূজপুর থানার সুয়াবিলে (২ ফেব্রুয়ারি) বসতঘরে ঢুকে মহিনুদ্দিন নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, নগদ টাকা লুট ও ৫ মার্চ গভীর রাতে বিএনপির এক নেতার নেতৃত্বে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ ভ্যান থেকে ৬ জন আসামি ছিনতাই, ২৯ জানুয়ারি স্কুলে যাওয়ার পথ থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ চেষ্টার মতো ঘটনা ঘটে।
এসময় স্থানীয় ৪ জনকে আটক করে পুলিশে দেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারি মামলার সাক্ষী হওয়ায় বাগান বাজারে ইউনুছ মিয়া সুমন নামে এক ইউপি সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া বাগান বাজারে কৃষক হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধনে দুপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধীরা খুন, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ঘটালেও পুলিশ যেন দেখেও না দেখার বাহানা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত।
এছাড়া ভূজপুর থানার ৬ ইউনিয়নে সমানতালে চলছে মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাদের। প্রতিদিন কৃষিজমির টপসয়েল থেকে শুরু করে পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাটি কাটার বিরুদ্ধ তৎপর হলেও ভূজপুর থানা পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন সুয়াবিল থেকে গার্ডের দোকান, হেয়াকো, জুজখোলা, তারাখো এসব এলাকায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে অপরাধীরা। সড়কে ছিনতাই, বাসা-বাড়িতে চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে অপরাধীরা। এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তৎপরতা নেই পুলিশের।
ভূজপুরের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বিন হক বলেন, দিন দিন ভূজপুরে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরাধীরা কোনো কিছুকে যেন ভয় পাচ্ছে না। এরকম হতে থাকলে সাধারণ মানুষ আর স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহবুবুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। যে-সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ঘটনার আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি পরস্পর সহনশীল হন এবং ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন, তবে যেকোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে পুরো উপজেলায় শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যেতে পারে’।