
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
নবাবগঞ্জে এখনো চলছে সালমান রহমানের দোসর রেশমীর ত্রাসের রাজত্ব

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪২ পিএম

আরও পড়ুন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অন্যতম দোসর আওয়ামী লীগ নেত্রী রেশমীর আক্তারের দাপটে নবাবগঞ্জ-দোহার এলাকার সাধারণ মানুষ এখনো ভীতসন্ত্রস্ত। আওয়ামী আমলের মতোই এখনো রেশমী বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন তার ত্রাসের রাজত্ব।
চিহ্নিত এই মাদক ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ আমলে সালমান রহমানের ক্ষমতার প্রভাবে নবাবগঞ্জে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেন। তার নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও ছিল। অথচ রহস্যজনক কারণে গণ-অভ্যুত্থানের পর গত সাত মাসেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। উলটো এখন আবার প্রশাসনের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে ফের নবাবগঞ্জে চুটিয়ে মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করেছেন। এমনকি যারা তার এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে এসব ঘটনায় এলাকায় জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নবাবগঞ্জের ভুক্তভোগী শত শত মানুষ তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার জোর দাবি জানিয়েছেন। রেশমীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা না হলে শিগগির এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর এলাকার বাসিন্দা রেশমী আক্তার। উপজেলাজুড়ে মাদক ব্যবসা, প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড-কোনো কিছুই বাদ দেননি এই নারী নেত্রী। স্বামী আবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বক্সনগর থেকে পুরো উপজেলা। এখন আবার ভোল পালটে আওয়ামী লীগের এই নেত্রী নিজেকে জাতীয় পার্টির নেত্রী পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক একজন এমপির নাম ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। বাস্তবে যার কোনো সত্যতা নেই। এমনকি এ পরিচয়কে সামনে এনে সম্প্রতি থানায় ঢুকে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করেন চিহ্নিত এই মাদক কারবারি।
জানা যায়, এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন রেশমী। তবে তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের নাম ব্যবহার করা, প্রভাবশালী মহলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবজি ও অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ উঠায় জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এতেও থেমে যায়নি তার অপকর্ম। জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর চাঁদাবাজি আর মাদক কারবার টিকিয়ে রাখতে সালমান এফ রহমানের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। এজন্য ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর সালমান এফ রহমানের হাতে হাত রেখে যোগদান করেন আওয়ামী লীগে।
এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয়ে যায় তার রাম রাজত্ব। আগের অপরাধের সঙ্গে যোগ হয় নতুন প্রতারণা। ভুয়া এনজিও খুলে সাধারণ জনগণের লাখ লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেন। পাশাপাশি মাদক ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। এভাবে কম সময়ের ব্যবধানে সালমান এফ রহমানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন এই মাদকসম্রাজ্ঞী।
রেশমীর পাশাপাশি তার অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তার স্বামী আবুল হোসেনও। অভিযোগ আছে, রেশমীর মাদক ব্যবসা দেখভাল করতেন স্বামী। মাদকসহ একাধিকবার গ্রেফতারও হন এই আবুল। তবে বের হয়ে স্ত্রীর সহায়তায় ফের মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন। তবে এতসব অপকর্মের কথা প্রশাসন জানলেও সালমান এফ রহমানের বদৌলতে তাদের কিছুই হয়নি।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, রেশমী ও তার স্বামী নবাবগঞ্জে অপরাধের রাজা-রানী। এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেননি। এখনো অব্যাহত রেখেছেন। রেশমীর অপকর্মের কারণে জাতীয় পার্টি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আওয়ামী লীগের পতনের পর সবাই ভেবেছিল প্রথমেই গ্রেফতার হবে রেশমী। কিন্তু কিছুই হয়নি তার। তবে অদৃশ্য শক্তির কারণে রেশমীর নামে কোনো মামলাও হয়নি। মামলা না হওয়ায় ভোল পালটে নিজেকে ফের জাতীয় পার্টির নেত্রী পরিচয় দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অথচ স্বৈরাচারের নেত্রী হিসাবে তার এখন জেলে থাকার কথা।
মোসলেমহাটি এলাকার বাসিন্দা রোকন হোসেন বলেন, রেশমী আক্তার আলু-বেগুনের মতো পুরো নবাবগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসা করে বেড়ান। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাকে কিছুই বলে না। এই মাদকের কারণে আজ যুব সমাজ ধ্বংসের পথে। ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পর রেশমী আটক হবে। এলাকার মানুষ তার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু উলটো তার দাপট আরও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা এই মাদক ব্যবসায়ী ও সমাজের শত্রু থেকে মুক্তি চাই।
আতরব আলী নামে আরেকজন অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় এমন কোনো অপকর্ম নেই যে রেশমী করে না। আওয়ামী লীগের পতনের পর তার থাকার কথা ছিল জেলহাজতে। অথচ সে এখনো প্রকাশ্যে সব ধরনের অপকর্ম করেই যাচ্ছে। দেশে কি প্রশাসন বলে কিছু নেই?
জানা যায়, সম্প্রতি রেশমী নবাবগঞ্জ থানায় গিয়ে নিজেকে জাতীয় পার্টির বড় নেত্রী পরিচয় দিয়ে থানা গরম করেন। এরপর তার অন্যায় কাজের প্রতিবাদকারী এলাকার মো. কাউছার, সারজন, মিসকাত এবং মো. শিমুল নামে চারজনের বিরুদ্ধে দশ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা করেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ঘটনায় এলাকায় তুমুল আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রেশমী আক্তার ২ এপ্রিল থানায় এসে নিজেকে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির নেত্রী ও নবাবগঞ্জ উপজেলা মহিলা পার্টির আহ্বায়ক দাবি করে থানা পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে জানতে পারি তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেশমী আক্তার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’