
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৮ পিএম
ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত সেই ইয়াসিনের বাড়িতে বিএনপি নেতারা

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম

আরও পড়ুন
ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ছাত্রদল নেতা ইয়াসিন শেখের বাড়িতে গেছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
তিনি বলেন, ইয়াসিন ছাত্রদলের একজন লড়াকু সৈনিক। তিনি ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। তার যতবার চাকরি হয়েছে, ততবারই শুধু ছাত্রদল করার কারণে নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়েছে। তার বাবার ইচ্ছে পূরণের জন্য রাশিয়া গিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এতে তার পরিবারে যে আনন্দের বন্যা বয়েছিল, নিমেষেই তা বিষাদে রূপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ইয়াসিনের পাশে আমরা আছি। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলীয় সব নেতারা রয়েছেন। ইয়াসিনের মা, আমাদের সবার মা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক কিছু অনুদান আজকে দেওয়া হয়েছে। একটি নতুন ঘরও উপহার দেওয়া হবে। সেই ঘরটি করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেবেন এলাকার কৃতী সন্তান সার্জেন্ট ইকবাল হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, অ্যাডভোকেট নুরুল হক, হাফেজ আজিজুল হক, হাবিবুর ইসলাম খান শহিদ, আব্দুল আজিজ মন্ডল, এসএম দুলাল, সুজিত কুমার দাস, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসিম সাত্তার মন্ডল, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান বাবুল, জর্জকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু জাফর রাশেদ মিলন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহ নাসির উদ্দিন রুমন, ময়মনসিংহ উত্তর মহিলা দলের সভাপতি তানজিন চৌধুরী লিলি, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর আনিছ, উত্তর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সোহেল প্রমুখ।
ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন ইয়াসিন মিয়া শেখের মা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, আমার পুতটারে এনে দেন, আর কিছু চাই না, পুতটারে এনে দেন।
তিনি বলেন, আমার ছেলের চাকরি হয়েছিল। নিয়োগপত্রও পেয়েছিল। তারপরে যখন জানলো ছাত্রদল করে তখন তার নিয়োগপত্র বাতিল করে দেওয়া হল। শুধু ছাত্রদল করার কারণেই সে চাকরি পায়নি।
ইয়াসিন মিয়া শেখ ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালী গ্রামের আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে। গত ২৭ মার্চ রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধে তিনি নিহত হন। এ খবর পরিবার জানতে পারে ১ এপ্রিল।
উঁচু-লম্বা আর সুন্দর চেহারার অধিকারী ইয়াসিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে, এটা ছিল তার বাবার ইচ্ছে। তিনি ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ এসএসসি পাশ করেন। এরপরে দেশের মাটিতে সৈনিকে যোগ দিতে একাধিকার সেনাবাহিনীর লাইনেও দাঁড়িয়েছিলেন। ২০২১ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপরে বঙ্গবন্ধু কলেজে অনার্স পড়েন।
এক ভিডিও বার্তায় ইয়াসিন জানিয়েছিলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে অফার লেটার পেয়ে চলে যান রাশিয়া। মস্কো থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরের ওই কোম্পানিতে তিন মাস চাকরির পর অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেন।
দেশের হয়ে না হলেও বিদেশে সৈনিক হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ হয় বলেও জানান তিনি। ওই ভিডিওতে আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্য দোয়াও করেন সাবেক এই ছাত্রদল কর্মী। যুদ্ধে মৃত্যু হলেও তার কোনো আফসোস থাকবে না বলেও ভিডিও বার্তায় জানিয়ে দেন ইয়াসিন।
ইয়াসিন আরও উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে আন্দোলনে গিয়েছি, হরতাল-জ্বালাও-পোড়াও এর মধ্যদিয়ে অসংখ্যবার জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছি। সেদিন বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় বেরিকেডে পড়েছিলাম। সেই বেরিকেড ভেঙে এসেছি। এতে আমি যুদ্ধে যাওয়ার সাহস পেয়েছি, যুদ্ধে মৃত্যু হলেও আমার এখন কোনো আফসোস থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, মাহে রমজানের এই দিনে আমি আমার নেতা গৌরীপুরের জনমানুষের নেতা আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণসহ দলীয় নেতাকর্মীকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
নিহত ইয়সিন তার বাবাকে হারান ২০১৬ সালের ১ মার্চ। বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পোশাক পরে সেই পোশাক স্পর্শ করে ইয়াছিন বলেন, বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে এই পোশাক বাবাকে উৎসর্গ করলাম।
ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করার মাস না যেতেই যুদ্ধে ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় ইয়াসিন নিহত হন।
ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রবিকুল ইসলাম রবি জানান, ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শেখেন ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তার তিনি রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে ভালো চাকরি পান। সবই ঠিকঠাক চলছিল। পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনী যোগ দিয়ে সব উলোটপালট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে অনাপত্তি পত্রে তাদের স্বাক্ষর নেন এজেন্সির লোকজন। গত ২৬ মার্চ তার মা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন ইয়াসিন। কয়েক দিনের মধ্যেই দশ লাখ টাকা পাঠাবেন বলে মাকে জানিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে নিহত ইয়াসিনের লাশের কি অবস্থা, লাশ দেশে আনা যাবে কি না- এসব বিষয়ে কোনো তথ্যই পাচ্ছে না ইয়াসিনের পরিবার। ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের কান্না থামছেই না। শোকে হতবিহবল পরিবারের সদস্যরা। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
খবর পেয়ে গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা মরিচালি গ্রামে ইয়াসিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান জানান, বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।