
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৫ এএম
ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে পাহাড়-পর্বতে পর্যটকরা

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
-67efff0e1394d.jpg)
বান্দরবানে ঈদের ছুটিতে পর্যটন ম্পট নীলাচল-দেবতাখুমে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা
আরও পড়ুন
বান্দরবানে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে পাহাড়ের বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা। ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলার দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোতে। জেলা শহরের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে কোথাও রুম খালি না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন পর্যটকেরা। চাপ সামলাতে রাতযাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুলে দেওয়া হয় জেলা স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়নও।
সরেজমিন ঘুরে জেলা সদরের দর্শনীয় পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, চিম্বুক, ডাবল হেন্ডস ভিউ, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, বুড্ডিস্ট ট্যাম্পলসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রকৃতির কাছাকাছি নির্মল ছায়ায় ঘুরে বেড়াতে অনেকেই ছুটে গেছেন রহস্যময় দর্শনীয় স্থান দেবতাখুমসহ দূর-দূরান্তের পাহাড়-পর্বতে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি সাদিয়া সুলতানা ও সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ ও নিজেদের অফিস বন্ধ থাকায় ঈদের ছুটি কাটাতেই পরিবার নিয়ে বান্দরবান ঘুরতে এসেছি। এখানে চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ। মোটামুটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল। তবে বেড়াতে অনেকেই হোটেলে থাকার রুম না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে দেখলাম। এ বিষয়টি নজরে নিয়ে প্রশাসনসহ ব্যবসায়ীদের সতর্কতামূলক প্রচারণা দরকার; যাতে পর্যটকরা হুট করে ছুটে এসে ভোগান্তিতে না পড়েন।
নারায়ণগঞ্জের পর্যটক টিমের দলনেতা সাব্বির ও সায়েদুল বলেন, আগেও কয়েকবার বান্দরবান ভ্রমণে এসেছিলাম, কখনও এতটা চাপ দেখিনি, হোটেলে রুম পেতেও সমস্যা হয়নি। তাই এলাকা থেকে শিশু, নারী-পুরুষ মিলে ৪৭ জনের টিম নিয়ে দুই দিনের জন্য বান্দরবান বেড়াতে এসেছিলাম। এবার কোথাও রুম ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়নে রাতযাপন করতে পেরেছি। পর্যটকবান্ধব আচরণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এদিকে ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে আবাসিক হোটেল, মোটেল রিসোর্ট, পরিবহণ এবং রেস্টুরেন্ট মালিক-শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
জেলা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার এবং সর্বাত্মক সেবার মাধ্যমে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সম্মলিতভাবে কাজ করছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নিতে শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অগ্রিম বুকিং না করে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হোটেলে রুম না পেয়ে সাময়িক ভোগান্তিতে পড়েছেন। অবশ্য এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তারপরও প্রশাসন এবং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তবে সুপার পিক আওয়ারগুলোতে রুম বুকিং ছাড়া বান্দরবান ভ্রমণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
পাহাড় কন্যা বান্দরবান জেলায় রয়েছে- লেকের উপরে আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু, অসংখ্য ঝর্ণা ধারা, রহস্যে ঘেরা দেবতাখুম, আলীর সুরঙ্গের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
এছাড়াও প্রকৃতি এবং শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো দর্শনীয় স্থান নীলাচল, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, ডিম পাহাড়, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দির, রামাজাদী, গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, শৈলপ্রপাত, পাহাড়ের ভিতরে তৈরি টানেলসহ দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটন স্পট।
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও বান্দরবানে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় জমেছে। ইতোমধ্যে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা সদরের হোটেলগুলোতে কোনো রুম ফাঁকা ছিল না। অধিকাংশ রিসোর্টে আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত সব রুম বুকিং রয়েছে।
হোটেল গার্ডেন সিটির স্বত্বাধিকারীরা জাফর উল্লাহ ও হোটেল ডি’মোরের অপারেশন ম্যানেজার হ্যাপী মারমা বলেন, কয়েক দিন কোনো রুমই ফাঁকা ছিল না। তবে শনিবার থেকে পর্যটকদের চাপ কমে আসবে। কয়েক বছর পর ঈদে পর্যটকদের এমন সাড়া পেয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন আবারও।
জেলা টুরিস্ট পুলিশ কর্মকর্তা সৈকত কুমার রায় বলেন, টানা ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আগমন ঘটেছে। বাড়তি চাপ সামলাতে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জেলা টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। দর্শনীয় স্থানগুলোতে টহলের পাশাপাশি পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত দিয়েও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটন জেলা বান্দরবান। হোটেল, মোটেল রিসোর্টগুলোও পরিপূর্ণ থাকায় পর্যটকদের সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়ন পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছিল। ঈদের লম্বা ছুটিতে বান্দরবান ভ্রমণে আগাম রুম বুকিং নিশ্চিত করে বেড়াতে আসার জন্য পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা সম্মিলিতভাবেই কাজ করেছে।