
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম
তালাবদ্ধ শিশুপার্ক, ভিড় মেঘনার ভাঙন এলাকায়

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৮ পিএম

আরও পড়ুন
তিন একর জামির ওপর নির্মাণ করা হয় শিশুপার্কটি। ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে শিশুপার্কটির কাজ শতভাগ শেষ না হতেই করা হয় উদ্বোধন। কিন্তু এরপরেই ঘটে বিপত্তি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে পার্ক নির্মাণের অভিযোগে মামলা করেন একজন। শুরু না হতেই বন্ধ হয়ে যায় পার্কটি। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বাধ্য হয়ে মেঘনার ভাঙন এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুরা। ঘটনাটি লক্ষীপুরের রায়পুরের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দেড় বছর ধরে উপজেলার চরপাতা স্মার্ট গ্রামের
একমাত্র শিশুপার্কটির গেট তালাবদ্ধ। এ সুযোগে পার্কটির সব মালামাল চুরি হয়ে গেছে। পরিত্যাক্ত
অবস্থায় পড়ে আছে পার্কটি। বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় রায়পুরে মেঘনার পাড় (আলতাফ মাষ্টার
ইলিশা ঘাট) ও জ্বীনের মসজিদ এলাকায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
শুক্রবার সকাল থেকেই রায়পুরের মেঘনারপাড়, জ্বীনের মসজিদ, হায়দরগন্জ সাজু
মোল্লার মাছঘাট, দালাল বাজার খোয়া সাগর দিঘির পাড়, জমিদার বাড়ি, মজুচৌধুরী ঘাট ও রামগতির
আলেকজেন্ডার নদীর পাড়ে মানুষদের ভিড় দেখা গেছে। সময় যত গড়িয়েছে স্থানগুলোতে বেড়েছে
মানুষের সমাগম। কেউবা আসছে বন্ধুদের নিয়ে। আবার কেউবা পরিবার নিয়ে।
বাবা-মায়েরা বলছেন, নদী ও পশুপাখিদের সঙ্গে পরিচয় করাতেই তারা বাচ্চাদের
নিয়ে এসেছেন নদীর পাড়ে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন অনেকেই।
আরও বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন আছে বলেই মন্তব্য করেন ঘুরতে আসারা।
উপজেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ভাঙন কবলিত এলাকায় যাচ্ছে ঈদে ছুটি
পাওয়ারা। সেখানে গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিনোদনকেন্দ্র। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে
কয়েকটি রেষ্টুরেন্টও। সেসব জায়গায় ভিড় করছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন ঘুরতে
আসা মানুষ। কেউ মাছ শিকারের দৃশ্য দেখছেন আর কেউ মেঘনায় জলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে
বিমোহিত হচ্ছেন। আবার সেই স্মৃতি ধরে রাখছেন মোবাইলের ক্যামেরায়। পাশপাশি বাঁধের পাশে
গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ ও ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে মুখরোচক খাবার খাচ্ছেন। অনেকে সাঁতার কাটছেন।
বাঁধের পাশের চরবংশী, চরইন্দ্রুরিয়া, চরজালিয়া, চরপাঙ্গাসিয়া ও চররমনী এলাকাজুড়ে এসব
দৃশ্য দেখা যায়।
রায়পুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার মেঘনার
তীরে ব্যক্তি উদ্যোগে বাঁধ দিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে ইলিশ মাছের কয়েকটি আড়ৎ করেছেন। সেই
সঙ্গে নদীর পাশ দিয়ে ঝাউসহ বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছে লাগিয়েছেন। দর্শনার্থীদের বসার জন্য
বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করেছেন বেঞ্চ। দৃষ্টিনন্দন করার জন্য সাজানো হয়েছে লাইট দিয়ে।
রায়পুরের পাশ্ববর্তী ফরিদগন্জ উপজেলার সাহেবগন্জ গ্রাম থেকে স্ত্রী ও
দুই সন্তানকে নিয়ে আলতাফ মাষ্টারঘাটে এসেছেন
প্রবাস ফেরত সাইফুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘মেঘনার তীরে বাঁধের সৌন্দর্যের কথা শুনেছি।
ঈদের দিন পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে ভালো লেগেছে। ছোট ছোট নৌকায় মাছ শিকার করতে দেখে বাচ্চারা
আনন্দ পেয়েছে। মেঘনার সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হয়েছি।’
জেলা শহর থেকে রুবেল ও মারিয়া দম্পতি এসেছিলেন আলতাফ মাছঘাটে। তারা জানান, বিয়ের চার মাস হলেও কোথায়ও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। মেঘনার তীরে এসে তারা মুগ্ধ হয়েছেন। সমুদ্র সৈকতের আদলে সাজানো হয়েছে বলে তারা আনন্দিত হয়েছে।
রায়পুরের চরইন্দ্রুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাসেম মাঝি। ২০০১ সালে ভাঙনে
তাদের দোকান ও বাড়ি মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। বাড়ির অবশিষ্ট জমিতে বাঁধের পাশে এখন রেস্তোরাঁ
খুলে ব্যবসা করছেন তিনি। বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যোগে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কারণে এখন জনপদটির
চিত্র বদলে গেছে। এখানে বিভিন্ন স্থানের পর্যটক আসছেন।’
শিশু পার্ক নিয়ে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবু নাছের বাবু বলেন, ‘উপজেলা
প্রশাসন খাস জমি উদ্ধারের পাশাপাশি আমার শ্বশুরের জমি দখল করে নেয়। অধিগ্রহণ করলেই
তো বিরোধ মীমাংসা হয়ে যায়। গত এক বছর ধরে পার্কটির কার্যক্রম বন্ধ।’
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান খান বলেন, ‘গত ৫৫ বছরেও শহরে
একটা বিনোদনকেন্দ্র না হওয়ায় দুর্ভাগ্য। মেঘনার তীরে ইলিশ ঘাটের পাশাপাশি বিনোদনকেন্দ্র
হওয়ায় মানুষ সেখানে যাচ্ছেন। ঈদের কারণে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।’