
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
রিসোর্টগুলোতে রুম খালি নেই, পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন মাচাংঘরগুলোতে

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৩ এএম

ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে বান্দরবানে পাহাড়ের বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটন স্পটগুলো। জেলা শহরের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে কোথাও রুম খালি না পেয়ে ভিড় জমাচ্ছেন পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ঘরে তোলা ইকো ট্যুরিজমের মাচাংঘরগুলোতে।
ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদরের দর্শনীয় পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, চিম্বুক, ডাবল হেন্ডস ভিউ, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, বুড্ডিস্ট ট্যাম্পলসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের ঢল নেমেছে। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে রহস্যময় দর্শনীয় স্থান দেবতাখুমসহ পাহাড়ের বন জঙ্গলে দূর-দূরান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা।
বেড়াতে আসা পর্যটক নাদিয়া খানম, জেসিকা, সাব্বির আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে পরিবারের সঙ্গে বান্দরবান ঘুরতে এসেছি। এখানের মন জোড়ানো পাহাড়ের প্রকৃতি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পটের সৌন্দর্যগুলো দেখে খুবই ভালো লেগেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভ্রমণকারী পর্যটক সাজ্জাদ, আবির অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃতি বান্ধব পর্যটন এবং অবকাঠামো সড়ক উন্নয়নে যত্নবান হতে হবে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস থেকে বিরত থাকতে হবে। পাহাড় আমাদের ভীষণ ভালো লাগে, তাই ছুটি পেলেই পাহাড়ে ছুটে আসি ঘুরে বেড়াতে। পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের যত্নশীল হবার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে আবাসিক হোটেল, মোটেল রিসোর্ট, পরিবহণ এবং রেস্টুরেন্ট মালিক-শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
জেলা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সম্মলিতভাবে কাজ করছি। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক সাংগঠনিকভাবেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যটকদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার এবং সর্বাত্মক সেবা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অপার সম্ভাবনাময় পাহাড় কন্যাখ্যাত বান্দরবান জেলায় রয়েছে চোখ জুড়ানো সব সৌন্দর্য। লেকের উপরে আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু, অসংখ্য ঝর্ণা ধারা, রহস্যে ঘেরা দেবতাখুম, আলীর সুরঙ্গের মতন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়াও প্রকৃতি এবং শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো দর্শনীয় স্থান নীলাচল, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, ডিম পাহাড়, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দির, রামাজাদী, গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, শৈলপ্রপাত, পাহাড়ের ভেতরে তৈরি টার্নেলসহ দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটন স্পট।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারো ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় জমেছে বান্দরবান। ইতোমধ্যে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা সদরের হোটেলগুলোতে কোনো রুম ফাঁকা নেই। অধিকাংশ রিসোর্টে আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত সবগুলো রুম বুকিং রয়েছে।
হোটেল গার্ডেন সিটির স্বত্বাধিকারীরা জাফর উল্লাহ ও হোটেল ডি’মোরের অপারেশন ম্যানেজা হ্যাপী মারমা বলেন, সবগুলো রুমই বুকিং রয়েছে আমাদের। আগামী কয়েকদিন কোনো রুম ফাঁকা নেই। দীর্ঘ কয়েকবছর পর ঈদে পর্যটকদের এমন সাড়া মিলেছে বান্দরবান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন আবারো।
জেলা টুরিস্ট পুলিশ কর্মকর্তা সৈকত কুমার রায় বলেন, টানা ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আগমন ঘটেছে। বাড়তি চাপ সামলাতে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জেলা টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা কাজ করে যাচ্ছেন। দর্শনীয় স্থানগুলোতে টহলের পাশাপাশি পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত দিয়েও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটন স্পটগুলো। হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোও পরিপূর্ণ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা সম্মিলিতভাবেই কাজ করেছে। রুমা ও থানচি উপজেলা ব্যতিত অন্যসবগুলো পর্যটন স্পটেই ঘুরে বেড়াতে পারছেন পর্যটকেরা।