
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ এএম
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল ভাঙচুর

ব্রাহ্মষবাড়িয়া ও কসবা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০:২২ এএম

আরও পড়ুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। এমনকি রোগীর মৃত্যুর পর পালিয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকালে পৌর শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত জমজম হাসপাতালে এ ঘটনা
ঘটে।
মৃত প্রসূতি শাকিবা আক্তার (২০) উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের তিনলাখপীর
এলাকার বাচ্চু মিয়ার মেয়ে ও কাইমপুর ইউনিয়নের গংগানগর গ্রামের অহিদ মিয়ার ছেলে সাদেক
হোসেনের স্ত্রী।
প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালিয়েছে মৃতের স্বজন ও
স্থানীয় জনতা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লাশ উদ্ধার করে জেলা
সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মৃতের স্বামী সাদেক হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী
শাকিবাকে নিয়ে পৌর শহরের নতুন বাজারে মডেল মসজিদের পাশেই অবস্থিত জমজম হাসাপাতাল আসেন
তিনি। হাসপাতালে আনার পরে চিকিৎসকের নির্দেশনায় তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা
শেষে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার (সিজার) করানোর কথা জানান সাদেক ও প্রসূতির বাবা- মাকে।
দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেওয়া হয়ে শাকিবাকে। সুস্থভাবে হাসিমুখে
হেঁটেই ওটিতে যায় শাকিবা। কিছুক্ষণ পরে তার একটি মেয়ে হয়। নবজাতককে শাকিবাকে দেখানো
হলে মেয়ের কপালে চুমু দেন তিনি। এরপর নবজাতকের দেওয়া হয় স্বজনদের কাছে।
ওইদিকে ওটিতে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে শাকিবার শরীর। তার শরীর ফ্যাকাশে
হতে থাকে। সিজারের আধ ঘণ্টার মধ্যে প্রসূতির শরীর ফ্যাকাসে হতে থাকে। তা দেখে চিন্তায়
পড়ে যায় স্বজনেরা। জানতে চাইলে ওটিতে থাকা দায়িত্বরতরা জানান, অজ্ঞানের ওষুধের কারণে
ঘুমিয়ে আছে প্রসূতি। তাকে নেওয়া হয়ে ওটির পাশের একটি কেবিনে।
দীর্ঘক্ষণ শাকিবা নড়াচড়া না করায় স্বজনদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। পরে
কেবিনে গিয়ে সাদেকের বাবা অহিদ মিয়া দেখেন শাকিবা নিশ্চুপ ঘুমিয়ে আছেন, তার চেহারা
ও ঠোঁট ফ্যাকাশে হয়ে আছে। নড়াচড়া না দেখে তিনি শাকিবার নাকে আঙ্গুল ধরে দেখেন শ্বাস-প্রশ্বাস
চলছেনা। শাকিবা জীবিত নেই বলে তার সন্দেহ হয়ে। তখন চিকিৎসককে ডাকেন তিনি। চিকিৎসক না
এসে একজন নার্সকে পাঠান।
নার্স এসে প্রসূতির অবস্থা দেখে চিকিৎসককে ডাকেন। চিকিৎসক এসে বুঝতে
পারেন শাকিবা মারা গেছেন। এ সময় কৌশলে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের লোকজন পালিয়ে যায়।
হাসপাতালের লোকজন খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি বিকেল পর্যন্ত গড়ায়। পরে বিকেল ৫টার দিকে উত্তেজিত
স্বজন ও স্থানীয়রা হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় ভর্তি হওয়া অন্য রোগীদের অন্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে
খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে মৃতের লাশ উদ্ধার করে।
মৃত প্রসূতির বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘ওরা আমার সুস্থ মেয়েটাকে মেরে
ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। হাসপাতাল নামের
কসাইখানাগুলোকে বন্ধ করতে হবে।’
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, ‘লাশ উদ্ধার করে
ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি
চলছে।’