
প্রিন্ট: ৩১ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম
সন্তানদের লাশ না দেখাতে বাবার ওসিয়ত, এলাকায় হট্টগোল

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম

আরও পড়ুন
‘আমি মরে গেলেও তোরা আমার ছেলেদেরকে লাশ দেখতে দিবি না’ আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের কয়েকজন সদস্যের মাঝে এমন ওসিয়ত করে মারা যান ৭০ বছরের ছমির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
ছমির উদ্দিন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের ভাংগুরহাটি
গ্রামের একরাম হোসেনের ছেলে।
তার ওসিয়তকে কেন্দ্র করে মৃতের স্ত্রী-সন্তান ও এলাকাবাসীর মধ্যে হট্টগোল
সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তির সন্তানরা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের
সহযোগিতা চান।
ছমির উদ্দিনের ছেলে রায়হান উদ্দিন বলেন, এলাকার লোকজন আমাকে বাবার লাশ
দেখতে দেয়নি। অনেক জোর করে শুধু জানাযায় অংশ নিতে পেরেছি।
সহনাটী ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান লিটন বলেন, সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায়
ছমির উদ্দিনকে মানসিক রোগী সাজিয়ে নেত্রকোণার একটি রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাহফুজ ইবনে
আইয়ুবের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে আনা হয়। প্রশাসন ও এলাকাবাসী তাকে দেখভালের দায়িত্ব
দেন আমাকে। চার থেকে পাঁচদিন আগে ছমির উদ্দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ অবস্থায়ও তার ছেলে বা স্ত্রী তাকে দেখতে যাননি।
তিনি আরও বলেন, রিহ্যাব সেন্টার থেকে আনার পর ছমির উদ্দিন তার স্ত্রীকে
তালাক দেন। গ্রাম পুলিশ দিয়ে সেই তালাকের চিঠিও পাঠানো হয়। যদিও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
এদিকে তিনি মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যেন তার লাশ দেখতে না পারে, সে জন্য ছমির উদ্দিন
পরিবার ও আমাদের কাছে ওসিয়ত করে যান।
মেহেদি হাসান লিটন বলেন, ছমির উদ্দিনকে শুধু পাগল সাজানো হয়নি। তার পায়ে
শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করতো ছেলেরা। এ কারণে ভয়ে তিনি বাড়িতে থাকতেন না। হয়তো বড়
ভাইয়ের বাড়িতে, আর না হয় বাজারের ঘরে থাকতেন। জমি লিখে না দেওয়ার কারণে এমন নির্যাতন
করা হতো তাকে।
ওসিয়তের বিষয়টি স্বীকার করে মৃত ব্যক্তির ছোট ভাই হাজী মো. আলাল উদ্দিন
মাস্টার বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানের কলহ ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি ক্ষোভে
ওসিয়ত করেছেন। ছেলেরা আসুক, তার বাবাকে দেখে যাবে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছেলেরা বাবার লাশের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে
হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। কিছু উত্তেজিত লোকজন ছেলেদের দিকে তেড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের
বাইরে চলে গেলে বাবার লাশ না দেখেই ছেলেরা সেখান থেকে সরে যান।
মৃতের স্ত্রী (তালাকপ্রাপ্ত) মেহেরুন নেছা (৬০) বলেন, আমার তিন ছেলে।
আমার স্বামী আমাকে ও ছেলেদের দেখতে পারতো না। আমাদের নির্যাতন করতো। কিছু লোকজন স্বার্থের
জন্য আমাদের মধ্যে সমস্যা লাগিয়ে রাখতো। আমাকে ও সন্তানদেরকে লাশটাও দেখতে দেয়নি। বাড়িঘরে
হামলা করারও হুমকি দিয়েছে।
মৃতের ছেলে রায়হান উদ্দিন বলেন, আমাদের তো জীবন বাঁচে না। বাবার সম্পত্তিতে
যাবো কিভাবে? বাবাকে ভুল বুঝিয়ে আগেও কিছু জমি বিক্রি করা হয়েছে। এখনো ১১ শতাংশ বাজারের
জমি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, সে খবরও আমাদের জানানো
হয়নি। বাবাকে দিয়ে মামলা করিয়ে আমাকে তিনবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে।