
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৯ এএম
ইডিকে চেয়ার থেকে টেনে নামানোর ঘটনায় আরও দুই প্রকৌশলী বরখাস্ত

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৩০ পিএম

আরও পড়ুন
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলামকে চেয়ার থেকে টেনে নামানোর ঘটনায় আরও দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে শোকজ করা হয়েছে বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামানকে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বিএমডিএর দুই প্রকৌশলী হলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী
সেলিম রেজা ও সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। আর তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়
অতিরিক্ত সচিব (সার ও উপকরণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ) আহমেদ ফয়সল ইমামকে। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের
সচিব বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৩ মার্চ নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলামকে হেনস্থার সঙ্গে বিএমডিএর
উপসহকারি প্রকৌশলী মেহেদী হাসান, সহকারি মেকানিক আপেল ও মেহেদী হাসান, গুদাম রক্ষক
মজিবুর রহমান, আব্দুল কাইউম খান, নুরুজ্জামান, ক্যাশিয়ার সফিকুল ইসলাম, গাড়ি চালক সাহাবুল
হকসহ ৫০ থেকে ৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এর মধ্যে
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা বিএমডিএর সিরাজগঞ্জ রিজিয়নের দায়িত্বে
নিয়োজিত হলেও অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থল থেকে রাজশাহীতে চলে যান।
এর আগে গত ২৫ মার্চ ঘটনার মুল হোতা বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যমূলক অবসরে পাঠায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
গত ২৩ মার্চ দুপুরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে বিএমডির নির্বাহী
পরিচালকের দপ্তরে ঢুকে পড়েন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর। নির্বাহী পরিচালক অতিরিক্ত সচিব শফিকুল
ইসলামকে চেয়ার থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নিজেই সেই চেয়ারে বসে পড়েন তিনি। এমনকি শফিকুল
ইসলামকে টানতে টানতে বরেন্দ্র ভবনের নিচে এনে জোর করে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। সাময়িক
বরখাস্ত হওয়া বিএমডিএর দুই প্রকৌশলী অতিরিক্ত সচিবকে চেয়ার থেকে টেনে নামাতে প্রধান
ভূমিকা পালন করেন। এ নৈরাজ্যকর ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত সচিব জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কৃষি
ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
বিএমডিএর সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, সংস্থার অগ্রানোগ্রাম অনুযায়ী বিএমডিএর
নির্বাহী পরিচালকের পদটি প্রশাসন ক্যাডারের একজন অতিরিক্ত সচিবের জন্য সংরক্ষিত একটি
প্রশাসনিক পদ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত
সচিবকে প্রেষণে এ পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম গত জুলাই থেকে
এ পদে নিয়োগ পেয়ে বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শফিকুল ইসলামকে
বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে বদলি করা হয়।
শফিকুল ইসলামের দাবি, তিনি মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না আসায় বিএমডিএ
থেকে অবমুক্ত হতে পারছিলেন না। রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিএমডিএতে দায়িত্ব
পালন করে যাওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরের
নেতৃত্বে তার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে বিএমডিএ ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি
করছিলেন। তিনি তাদেরকে রিলিজ স্লিপ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরক
বলেন, বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের পদটি একটি প্রশাসনিক পদ যা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত।
কেউ আওয়ামী লীগের দোসর হলে তার বিষয়ে তদন্ত হতে পারে। কিন্তু তাকে চেয়ার থেকে টেনে
নামানো এবং সেই চেয়ার দখল করা চাকরি বিধির গুরুতর লঙ্ঘন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়
শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে যা দরকার ছিল। তদন্তের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরের অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধেও
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।