
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৮ এএম
অপহরণ করতে গিয়ে তিন পুলিশ সদস্যসহ আটক ৪

ডামুড্যা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১:১৯ এএম

আরও পড়ুন
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় চারজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা দারুল আমান বাজার এলাকা মদন বেপারীর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরণকারীদের আটক করা হয়।
উদ্ধার হওয়া মোহাম্মদ জুয়েল সরদার (৩২) ও ফয়সাল সরদার (২৪) ভেদরগঞ্জ
উপজেলার ইকর কান্দি এলাকার বাসিন্দা। ডামুড্যা বাজারে তাদের কাপড়ের দোকান রয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- কৌশিক আহমেদ সেতু (৩০), কাউসার তালুকদার (২৯), রুবায়েত
মীর (২৭) ও শরীফ হোসেন (৩৫)। এর মধ্যে সেতু, কাউসার ও মীর পুলিশের কনস্টেবল বলে জানা
গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯টার দিকে একটি মাইক্রোবাস
ও একটি মোটরসাইকেল এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে চারজন নেমে জুয়েল
ও ফয়সালকে জোর করে গাড়িটিতে উঠায়। পরে অপহরণকারীরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাত ১টার দিকে
ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে আসলে স্থানীয়রা মাইক্রোবাসটি থামান। এ সময় দুই
ব্যবসায়ী স্থানীয়দের সহযোগিতা চান ও ঘটনা খুলে বলেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তিনজনকে
গণধোলাই দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। এ সময় কৌশলে পাঁচজন পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে
একজনকে শুক্রবার সকালে আটক করেছে পুলিশ।
অপহরণকারী রুবায়েত মীর বলেন, ‘কাউসার তালুকদার হচ্ছেন আমাদের বস। অপহরণের
সময় যে টাকা পেয়েছিলাম তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।’
প্রত্যক্ষদর্শী ফাহিম আব্বাস বলেন, ‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে শুনে আমি বাড়ি
থেকে বের হই। পরে শুনি ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনজনকে আটক করা হয়। পরে এলাকাবাসী
তাদের গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়। এছাড়া দুজন পালিয়ে যায়।’
ভুক্তভোগীদের চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুয়েল ও ফয়সাল অপহৃত হন।
তাদের ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপহরণকারীরা ফয়সালকে দিয়ে
তার বড় ভাই স্বাধীন সরদারকে ফোন দেয়। পরে ২০ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। তখন ব্যাংক,
বিকাশ ও নগদ থেকে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠায় তাদের। পরে আরও টাকা দাবি করলে তাদের লোভ
দেখিয়ে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আনা হয়। বাসস্ট্যান্ডে আসলে অপহরণকারীদের আটক
করা হয়। জুয়েল ও ফয়সালকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে
পুলিশে দেয়। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পরে একজনকে আটক করা হয়েছে।’
ভুক্তভোগী ফয়সাল বলেন, ‘আমরা কাপড় ব্যবসায়ী। দোকান থেকে রাতে কদরের নামাজ
পড়ার জন্য বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন বেপারীর বাড়ির সামনে
পৌঁছালে আমাদের গতিরোধ করে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। পরে পুলিশের পরিচয় দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে
পিস্তল ঠেকিয়ে তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে আমরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হই।
তবু তারা আমাদের মারধর করে। পরে আমাদের মাদারীপুর লেক পাড় নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে
দিয়ে আমার ভাই স্বাধীনকে ফোন দেওয়ায়। আমি তখন টাকা পাঠাতে বলি। তাদেরকে তিন লাখ ৯১
হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকার জন্য অপহরণকারীরা ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আসলে
স্থানীয়রা তাদের আটক করে। আমরা মুক্তি পাই।’
এ বিষয়ে ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘দুজন ব্যবসায়ী
রাতে দোকান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের অপহরণ করা হয়। তাদের কাছ থেকে টাকা
হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপহরণের ঘটনায় পুলিশ ও জনগণ চারজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে পুলিশ
সদস্য রয়েছে, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ’