
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩১ এএম
নিজের পুকুরে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে সড়ক বানাচ্ছেন মেম্বার

যুগান্তর প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:১৪ পিএম

আরও পড়ুন
মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর মাত্র ১৫ থেকে ২০দিন পর জমি থেকে কাটা হবে ইরি ধান। তবে এরই মধ্যে ঘটল বিপত্তি। সেই ধান গাছ নষ্ট করা হচ্ছে রাস্তা। বসতবাড়ি না থাকলেও শুধুমাত্র স্থানীয় ইউপি সদস্যের (মেম্বার) পুকুরে যাতায়াতের জন্য সেখানে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের।
এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নাম্বার ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক
ইকবাল হোসেনের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন
ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ওই রাস্তা
তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তার জেরে ক্ষতি হয়েছে ৪০ বিঘা ফসলি জমির। অথচ, কাবিখা প্রকল্পের
শর্তানুযায়ী, ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বিরোধপূর্ণ কোনো জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে
না। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করেই করা হচ্ছে রাস্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটপাড়া বরাক বিলের মাঝ দিয়ে ১০ ফুট প্রশস্ত
নতুন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সড়কের শেষ প্রান্তে কোনো বাড়িঘর নেই। রয়েছে কয়েকটি পুকুর।
সেই পুকুরের মালিক ইউপি সদস্য ইকবাল হোছাইন ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফসলি জমির মাঝখান
দিয়ে নতুন সড়কটি তৈরি করা হচ্ছে। সড়কের জন্য মাটি কাটা হচ্ছে ফসলি জমি থেকেই। এতে করে
সড়কের দুপাশ গভীর হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে।
কৃষকরা জানান, সরকারি প্রকল্পের কথা বলে ইউপি সদস্য ইকবাল তার নিজের
পুকুরে যেতে এ সড়ক নির্মাণ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা। এ ঘটনায় তারা ইউএনও
বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের দাবি, শুধুমাত্র ইউপি সদস্যের কথায় কোনো প্রকার
পরিদর্শন ও কৃষকদের মতামত না নিয়ে কৃষি জমির উপর দিয়েই এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে প্রকল্প
বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
স্থানীয় কৃষক ওলি মিয়া বলেন, ‘আগে এখানে ছোট রাস্তা ছিল। অনেকটা আইলের
মতোন। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী এখানে কোনো রাস্তা নেই। ইকবাল মেম্বার দুই বছর আগেও জোর
করে ছোট রাস্তাটিকে বড় করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীর প্রতিরোধে তা করতে পারেননি। এবার
রাতারাতি বেকু দিয়ে সেই রাস্তা করে ফেলছে।’
ইকরাম খা নামের আরেকজন বলেন, ‘এ রাস্তা কোনো গ্রামে বা বাড়িঘরে যুক্ত
হয়নি। শুধুমাত্র ইকবাল মেম্বার তার মালিকানাধীন পুকুর ও জমিতে যেতে কৃষকের সর্বনাশ
করে এই রাস্তা তৈরি করেছেন। অথচ ১৫ থেকে ২০ দিন পর এ ধান গাছে ফসল আসতো। ৩০ দিন পর
ফসল কেটে বাড়িতে তোলা হতো।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রাস্তা বানাতে বেশি জমি
পড়েনি। আর বেকু দিয়ে কাটতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস বলেছে। এ বিষয়ে ইউএনও
সাহেব ডেকেছিলেন। তিনি পরিদর্শনে আসবে। এখন সবাই আপত্তি করায় কাজ বন্ধ রেখেছি।’
সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। ইকবাল
হোসেন নামে একজন মেম্বার তার পুকুরে যেতে একটা রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এতে কৃষি জমি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাস্তা বা ঘরবাড়ি করতে পারে না।
এর জন্য উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। ঘটনাটি আমরা ইউএনওকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে
একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ইউএনও সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূইয়া বলেন, ‘ফসলি জমির উপর রাস্তা নির্মাণের
অভিযোগ এসেছে। উন্নয়ন যেমন দরকার আছে, তেমন কৃষি জমি সংরক্ষণে আমাদের ব্যবস্থা নিতে
হবে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। দেখা হবে রাস্তাটি জনগণের উপকারের কি না এবং কৃষি
জমির কোন ক্ষতি হচ্ছে কি না।’