Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন

অচল ১৯ কোটি টাকার ওয়াশিং প্ল্যান্ট, কেনা হয় অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে

আনু মোস্তফা

আনু মোস্তফা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:২১ এএম

অচল ১৯ কোটি টাকার ওয়াশিং প্ল্যান্ট, কেনা হয় অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন ধৌতকরণ প্ল্যান্ট বা ওয়াশপিট স্থাপন করা হয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ধৌতকরণ ব্যবস্থার পর্যাপ্ত সুবিধা ও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকলেও ব্যয়বহুল এই প্ল্যান্টটি অনেকটা প্রস্তুতিহীন অবস্থায় স্থাপন করা হয়। 

প্রায় ২০ মাস ওয়াশপিটটি অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। বিভিন্ন জটিলতায় ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল রাজশাহীর প্ল্যান্টটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার ম্যানুয়ালি ট্রেনগুলো ধৌতকরণ ও পরিষ্কার করা হচ্ছে আউটসোর্সিং শ্রমিক দিয়ে। এতে মাসে মাসে অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে বিপুল ব্যয়ে কেনা ওয়াশিং প্ল্যান্ট অচল হওয়ায় রেলের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে এই ধরনের মেশিন কেনা হয়। যা ব্যবহারের উপযোগীতা বিবেচনা করা হয়নি। রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য ফজলে কবির চৌধুরীর ব্যক্তিগত আগ্রহে ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি কেনা হয়েছিল। এই ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেল কোনো চাহিদা দেয়নি।

২০২১ সালের ৮ নভেম্বর রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে একই দিনে ওয়াশপিট দুটি উদ্বোধন করা হয়। দুটি প্ল্যান্ট স্থাপনে ব্যয় হয়েছিল ৩৮ কোটি টাকা। স্থাপনের সময় বলা হয়েছিল অত্যাধুনিক এই ওয়াশিং প্ল্যান্টের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেনের ছাদ, পার্শ্ব, ভেতর এবং আন্ডারগিয়ার সুচারুভাবে পরিষ্কার করা যাবে। ওয়াশপিটের মাধ্যমে প্রতিটি প্ল্যান্টে প্রতিদিন ১ লাখ লিটার পানি সাশ্রয় হবে ও ব্যবহৃত ৭০ ভাগ পানি রি-সাইকেলের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। বিদ্যুৎচালিত এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে ১৪ কোচের একটি ট্রেন ধৌত ও পরিষ্কার করার কথা ছিল। পানিতে শুধু জীবাণুনাশক ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হবে। সেভাবেই সীমিতভাবে ওয়াশিং প্ল্যান্টে ট্রেন ধৌতকরণের কাজ হয়েছে ২০ মাস। এই প্ল্যান্টে আগে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে দিনে মোট ১১টি ট্রেন ধৌতকরণ ও পরিষ্কারের কথা বলা হলেও সেখানে দিনে ৮টি ট্রেন পরিষ্কারের কাজ করা হতো। এর বড় কারণ ছিল জনবলের ঘাটতি। প্রধান যান পরীক্ষক (ক্যারেজ) পদে ওয়াশপিটের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কুরবান আলী। 

তিনি জানান, ওয়াশপিটটি যখন স্থাপন করা হয়েছিল তখন এখানে ৬২ ভাগ জনবলের ঘাটতি ছিল। ছিল না প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল। এখনো জনবলের ঘাটতি পূরণ হয়নি। আমরা শ্রমিক দিয়েই ট্রেন ধোয়ার কাজ করছি।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, রাজশাহীর ওয়াশিং প্ল্যান্টটি এখন ধুলাবালিতে ঢেকে গেছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হলেও তারা গত এক বছরেও প্ল্যান্টটি পরিদর্শন করেননি।

তিনি আরও বলেন, ওয়াশপিট স্থাপনের আগে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াতকারী মোট ৪টি ট্রেন ধৌত ও পরিষ্কারের কাজ হতো চব্বিশ ঘণ্টায়। প্ল্যান্টটি স্থাপনের পর থেকে এখন চব্বিশ ঘন্টায় মোট ১১টি ট্রেন পরিষ্কার করা যায়। তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। প্ল্যান্টটিতে একসঙ্গে দুটি ট্রেন ধৌত করার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় মেশিন অচল হওয়ার পরও চব্বিশ ঘণ্টায় ১১টি ট্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে সীমিত জনবল দিয়ে। যদিও জনবল ও শ্রমিক ঘাটতির কারণে ট্রেনগুলো পরিষ্কার করতে বেশি সময় লাগে।

জানা গেছে, মেশিনের সাহায্যে ট্রেনের শুধু ছাদ ও পার্শ্ব ধৌত করা হলেও আগেও ট্রেনের ভেতর পরিষ্কার করতে হতো শ্রমিক দিয়ে। যে কাজটি এখনো শ্রমিকরাই করছেন। ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে কেনা মেশিনের কোনো সুফল রেলওয়ে কখনো পায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের এনএস কর্পোরেশনের তৈরি ট্রেন ওয়াশিং মেশিনগুলো রেলওয়েতে সরবরাহ করেন নেক্সট জেনারেশান গ্রাফিকস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মেশিনগুলো কেন এত দ্রুত সময়ে অকেজো হয়ে গেল-সেটা নিয়ে রেলওয়েতে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, বন্ধ হওয়ার আগে আগে রাজশাহীর মেশিনটি ঠিকমতো সার্ভিস দিচ্ছিল না বলে জেনেছি। যেহেতু এসব মেশিন কোচ ক্রয় প্রকল্পের আওতায় কেনা হয়েছিল সে কারণে প্রকল্প পরিচালক এই বিষয়ে ভালো জানেন। তবে শুনেছি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি পুনরায় চালুর জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দের জন্য ঢাকায় রেল ভবনে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। এখন সেটা কবে নাগাদ অনুমোদন হয়ে আবার প্ল্যান্ট চালু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি পশ্চিম রেলের এই কর্মকর্তা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম