
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৮ এএম
চাঁপাইয়ে এলজিইডিতে যোগদানের পরদিন প্রকৌশলীর বদলি বাতিল

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১৬ পিএম

আরও পড়ুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীন সদর উপজেলা প্রকৌশলী পদে বদলি ও পদায়ন নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। এলজিইডির চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী পদে গত ১১ মার্চ যোগদান করেন নুরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম। তবে রহস্যজনক কারণে যোগদানের মাত্র একদিন পরে পেছনের তারিখ দেখিয়ে তার বদলি আদেশ বাতিল করা হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, এ তেলেসমাতি কর্মকাণ্ডে পেছন থেকে প্রভাব খাটিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। যদিও সাবেক এমপি হারুন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে প্রকৌশলী সুলতাানুল ইসলামের স্ত্রী গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাহফুজা ইমামের অভিযোগ- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য হারুনুর রশীদের আপত্তির কারণে তার স্বামীর বদলি বাতিল করা হয়েছে।
অভিযোগে তিনি বলেন, হারুন সাহেব চান সদর উপজেলা এলজিইডি চালাবেন তার অতি প্রিয়ভাজন সহকারী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলামকে দিয়ে। সদর উপজেলা প্রকৌশলীর পদ শূন্য থাকলেও তিনি এ পদে আরও কাউকে বদলি ও পদায়ন করতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন। আমি নিজে হারুনুর রশীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, আমি এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডিতে অন্য কাউকে নিতে পারব না। আমি হারুন সাহেবের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম মতির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বিএনপি নেতা মতিও আমাকে বলেছেন, এখন যা কিছু হবে হারুন ভাইয়ের কথাতেই হবে।
নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ এলজিইডির পোরশা উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমামকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। সরকারি বদলি আদেশ অনুযায়ী, সুলতানুল ইমাম গত ৯ মার্চ নওগাঁর পোরশা থেকে অবমুক্ত হন এবং গত ১২ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। ওই দিন সুলতানুল ইমাম যোগদানপত্র দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন তা গ্রহণ করে অফিস আদেশ জারি করেন।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ মিয়া স্বাক্ষরিত পেছনের তারিখ ১০ মার্চের অফিস আদেশ দেখিয়ে সুলতানুল ইমামের বদলি বাতিল করে তাকে পূর্বের কর্মস্থলে বহাল করেন। বদলি বাতিলের আদেশপত্রটি প্রকৌশলী সুলতানুল ইমাম হাতে পান ১৩ মার্চ সকালে। ফলে তিনি সদর উপজেলা প্রকৌশরীর পদে না বসে পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলীর পদটি শুণ্য রয়েছে। সহকারি প্রকৌশলী আজহারুল ইসলামকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছিল। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী আজহারুল ইসলামকেও জেলার নাচোল এলজিইডি অফিসে বদলি করা হয়। তবে আজহারুল ইসলাম বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে সদরে থেকে যাওয়ার জন্য জোর তদবির করেন। তিনি সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের শরণাপন্ন হন। হারুন দ্রুত ঢাকায় ছুটে যান। পরে সহকারি প্রকৌশলী আজহারুল ইসলামের বদলি আদেশ বাতিল করে তাকে উচ্চ গ্রেডের পদ সদর উপজেলা প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চিঠি পেয়েই আজহারুল ইসলাম অনার বোর্ডে নিজের নাম উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে লিখেন। চলতি দায়িত্ব কথাটি না লেখার বিষয়ে আজহারুল ইসলাম কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে অনার বোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এদিকে প্রকৌশলী বদলি সংক্রান্ত একটি কল রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। কল রেকর্ডে প্রকৌশলী সুলতানুল ইমামের স্ত্রী মাহফুজা ইমাম সাবেক এমপি হারুনুর রশীদকে বলছেন, ভাইয়া আমার স্বামী উপজেলা প্রকৌশলী। সে সদরে যোগ দিয়েছেন। আপনি একটু দেখবেন ভাইয়া। জবাবে হারুনুর রশীদ বলেন, না না না। আমি এখন অন্য কাউকে সদরে নিতে পারব না। এখানে আজহারই থাকবে।
উপজেলা প্রকৌশলীর বদলি বাতিল ও সহকারী প্রকৌশলীকে উচ্চপদে পদায়নে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, এটার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা সম্পূর্ণ এলজিইডির দাপ্তরিক বিষয়। আমি এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্য কাউকে নেব না-ফোনালাপ প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই প্রকৌশলী সুলতানুল ইমামের বদলি যোগদান ও পেছনের তারিখে বাতিলের বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ মিয়ার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রাজিব বলেন, স্যার মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভায় আছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।