ভোলায় শিক্ষক নেতাদের হত্যা মামলার আসামি করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

যুগান্তর প্রতিবেদক, ভোলা
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম
-67d97b63003d9.jpg)
ভোলায় আওয়ামী লীগ করার কারণে বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আটক করে হত্যা, খুন ও জখম মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তাদের চিহ্নিত অপরাধীর মতো ধরে পিটিয়ে জখম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা শিক্ষক সমিতি ।
মঙ্গলবার দুপুর ২ টার সময় ভোলা সদর উপজেলার শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভায় এসব মন্তব্য করেন।
শিক্ষক নেতারা বলেন, আমরা শিক্ষকদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাই এবং তাদের মুক্তি চাই।
জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১৬ মার্চ দুপুরে সদর উপজেলার কাচিয়া সাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভোলা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মীর আমীর হোসেন এবং রতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ভোলা সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. জাকির হোসেন তালুকদারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে কোনো রাজনৈতিক, দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা হয়নি। একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া তাদের কোনো অপরাধ নেই।
তিনি জানান, গ্রেফতারের পরে জানা গেল, ভোলা থানার ওসি হাচনাইন পারভেজ ভোলা সদর উপজেলার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক বরাবর লিখেছেন, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে ভোলা জেলা তেল-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি, অসহনীয় লোডশেডিয়ের প্রতিবাদে ভোলা সদর রোডের মহাজনপট্টিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়।
ওই সমাবেশে গ্রেফতারসহ অন্য আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিনা উস্কানিতে লাঠিচার্জ করে। যার কারণে সমাবেশে উপস্থিত প্রায় ৩ থেকে ৪হাজার শান্তিপ্রিয় জনগন এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করে। এমন সময় আসামিদের নির্দেশে পুলিশ ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তখন আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে সমাবেশস্থলে উপস্থিত জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলমের মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ায় সে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়ে।
পুলিশের ওসি আরও লিখেছেন, আসামিদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে স্বোচ্ছাসেবক দলের নেতা আ. রহিম মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, আমাদের কোনো প্রধান শিক্ষক ওইদিন সমাবেশে অংশ নিয়ে কারও ওপর লাঠিচার্জ কিংবা গুলি ছোঁড়েননি। শিক্ষক কখনও অস্ত্রবাজি করতে পারেন না। এটা ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, ভোলা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শহিদ আ. রহিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা নিন্দনীয় ঘটনা এবং অমানবিক। আমরা শিক্ষকরা সত্যিকারের অভিযুক্তদের বিচার চাই। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে নিরপেক্ষ ও নিরীহ শিক্ষকদের জড়ানো ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতা হিসাবে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এমন চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হবে না। বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি চাই এবং গ্রেফতার নিরপরাধ শিক্ষকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ভোলা জেলা শাখার সভাপতি উত্তর ভেদুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান মিজানুর রহমান, দক্ষিণ আলীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাহউদ্দীন, ইলিয়াস মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।