গৌরীপুরে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:২২ পিএম

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও লুটপাটে পরিবর্তন ঘটেনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইটের খোয়া, পাথর আর বিটুমিন। ধুলোবালির উপরে চলছে প্রাইম কোড আর কার্পেটিং।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলল উপজেলা সদরের বালুয়াপাড়া মোড় থেকে গাভীশিমুল পর্যন্ত প্রধান সড়ক সংস্কার ও মেরামতে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তবে তাদের সহযোগী হিসেবে এ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারা- এটা নিয়ে জনমনের নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে।
এ সড়কটি নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘গৌরীপুরে প্রধান সড়ক খানাখন্দকে ভরা’ ও ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন সংস্করণে ‘ভাঙা রাস্তায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনি, রিকশায় শিশুর জন্ম’ ও ১ অক্টোবর ‘গৌরীপুর ভাঙা রাস্তায় শিশুর জন্ম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর পৌর শহরের বালুয়াপাড়া মোড় থেকে শ্যামগঞ্জ সড়কের গাভীশিমুল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজটি করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন নেত্রকোণার মেসার্স সরোয়ার জাহান নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছে গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা।
রাস্তার টেন্ডার হওয়ার আগেই বিগত সরকারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর সেই সরকারের উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেবকে নিয়ে কাজের ভিত্তিপ্রস্তরের আগাম উদ্বোধন করেন। সাংবাদিকদের লেখালেখিতে কুলুপ আটকাতে এ ছলচাতুরির আশ্রয় নেন সেই সময়ের প্রশাসনের থাকা কর্তাব্যক্তিরাও।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব বলেন, আপনাদের লেখনির কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। টেন্ডার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন ইউএনও ফৌজিয়া নাজনীন।
৪ আগস্টে আওয়ামী লীগের মিছিলে থাকায় ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় ৫ আগস্টের পরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ঠিকাদার মো. সোহেল রানার বাসাবাড়িতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাহলে সড়ক নির্মাণ ও মেরামত কাজ করছে কে? এ নিয়ে প্রশ্ন এখন জনমনে!
সরেজমিন দেখা যায়, পাটবাজার মোড় থেকে রাস্তা সংস্কারে প্রাইমকোড করা হচ্ছে ধুলাবালির উপরে। ন্যূনতম পরিষ্কার ছাড়াই চলছে কার্পেটিং। সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের রয়েছে অভিযোগ।
পাটবাজারের ব্যবসায়ী নুরুল হক জানান, রাস্তার স্তরেস্তরে ধুলাবালির স্তূপ তার উপরেই পিচ ঢালছে।
কালিপুর মধ্যম তরফের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জনগণ বাড়ছে, রাস্তা বড়ো হচ্ছে। আর গৌরীপুরের রাস্তা এখন ২-৩ ফুট করে কমে গেছে। নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয় ও এসএস একাডেমির সামনে দেখা যায়, প্রাইমকোড ছাড়াই চলছে রাস্তার কাজ। উপজেলা হাসপাতালের সামনে দেখা যায়, রাস্তার ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের ইটের খোয়া।
উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব বলেন, আমাদের দপ্তরের লোকজন সবসময় থাকেন। যেসব বিষয়ে অনিয়ম ধরা পড়েছে, সেখানে সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকৌশল বিভাগ চেষ্টা করছে শতভাগ কাজ করতে।