রায়পুর সরকারি হাসপাতাল
তিন লাখ মানুষের সেবায় চিকিৎসক মাত্র ৪ জন

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

চিকিৎসক ও জনবলের তীব্র সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যে দিয়েই চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। মাত্র চারজন চিকিৎসক নিয়ে কোনোরকম চলছে হাসপাতালটি। এছাড়া হাসপাতালটিতে একটি এক্সরে মেশিন থাকলেও তার রিপোর্ট আসে ঝাপসা, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটিও নষ্ট এক বছর ধরে। ফলে দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এর আগে ৯ জন চিকিৎসক ছিল। তবে গত ১ মাসে ৫জন বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এখন মাত্র ৪জন চিকিৎসা দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। যার ফলে অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে রোগীদের সেবা কার্যক্রম।
এছাড়াও হাসপাতালটিতে ৩২ জন নার্সের মধ্য আছেন মাত্র ১৮ জন। ১৮ জনের মধ্যে ৪ জন নার্স প্রশিক্ষণে ও তিন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। অপরদিকে-১০টি ইউনিয়নের ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডাক্তারসহ জনবল সংকট। ভবনগুলোর অবস্থাও স্যাঁতস্যাঁতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হাসপাতালের ভেতরেই চারজন ডাক্তারকে নিয়ে ৩০০ টাকা ভিজিটে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রাখলেও গত ৬ মাস ধরে সেটিও রয়েছে বন্ধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়পুর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী এতো বছরে দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও জনবল। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের যে চিকিৎসক ও জনবল থাকার কথা, বর্তমানে তাও নেই এখানে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা, কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার বাসিন্দারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন দুইজন। আরেকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ থাকলেও তিনি সপ্তাহে মাত্র দুইদিন কাজ করেন এই হাসপাতালে। আর বাকি চারদিন ডেপুটেশনে কাজ করেন লক্ষ্মীপুর সদর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রায়পুর উপজেলার বাসিন্দারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিরত কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, সরকারি এ হাসপাতালে সঠিক কোনো সেবাই পাওয়া যাচ্ছে না। রোগী নিয়ে পড়তে হচ্ছে আরও দুর্ভোগে। গাইনি, অর্থোপেডিক, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নাই, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নাই। দালালের মাধ্যমে তিনগুণ মূল্যে বাহিরের হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা নিয়ে আসতে হয়।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হয়েও তারা সময়মতো ডাক্তারের দেখা পান না। ডাক্তাররা তাদের ইচ্ছেমতো আসেন এবং যান। টাকা না দিলে দেখা মিলে না সেবিকাদেরও। সেবা চাইলে অনেক সময় সেবিকাদের খারাপ আচরণের মুখে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
এদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা চরবংশী গ্রামের মাহমুদা বেগম, চরকাছিয়া গ্রামের মাহেনুর ও রায়পুর পৌর শহরের কাঞ্চনপুর গ্রামের নাজমুন নাজারসহ কয়েকজন রোগীর অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কাঙ্ক্ষিত ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকার টিকেটে পাওয়া গেলেও নির্দিষ্ট কক্ষে ডাক্তারদের দেখা পান না তারা। পরে বিমুখ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র সেবিকা ইয়াসমিন বলেন, ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকে।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীদের মানসম্মত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। গত এক মাসে ৫ জন ডাক্তার বদলি হয়ে চলে গেছেন। বিষয়টি বৃহস্পতিবার নতুন সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ডাক্তার সংকট নিরসন হলে রোগীরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পাবেন।
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন বলেন, রায়পুরের ডাক্তারসহ জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।