
প্রিন্ট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১০:২১ পিএম
কার্ড বণ্টনে ‘রাজনৈতিক কোটা’

শাহরিয়ার কামাল, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম

আরও পড়ুন
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে কমলনগরে রাজনৈতিক দলের কোটার ভিত্তিতে ভিজিএফ-এর কার্ড বণ্টনের অভিযাগ উঠেছে। এতে সরকারি বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৃত অতিদরিদ্র/অসহায় ও দুস্থ পরিবার।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে কমলগরের ৯টি ইউনিয়নের গরিব ও দুস্থদের জন্য সরকারি ৪৫২ টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ আসে। এসব চাল ৪৫ হাজার ১৯৯টি কার্ডের বিপরীতে জনপ্রতি ১০ কেজি করে বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে গেল সপ্তাহে ইউনিয়ন ভিত্তিক বরাদ্দ বণ্টনের পর সংশ্লিষ্ট পরিষদ তালিকা প্রস্তুতির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইউনিয়ন পরিষদের সভায় উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ‘কোটার’ ভিত্তিতে কার্ড বণ্টনের দাবি করেন। চাপের রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি মেনে নেয় পরিষদের দায়িত্বশীলরা। বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে হট্টাগোল হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে সম্মত না হলেও বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ ও জেএসডি (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নেতাদের বিভিন্নমুখী চাপে ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসকরা দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। এভাবে প্রভাব বিস্তার করে ‘কোটার’ ভিত্তিতে শতকরা হারে নিজ নিজ দলের জন্য কার্ড আদায় করে নিয়েছেন তারা। রাজনৈতিক দলের নেতাদের ‘বদনজর’ পড়ার ভয়ে এসব নিয়ে কথা বলার সাহস পাননি ইউপির চেয়ারম্যান ও প্রশাসকরা।
জানা গেছে, চরলরেন্স ইউনিয়নের জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্য বিএনপিকে এক হাজার, জামায়াত ৫শ’ ও গণঅধিকার পরিষদ ২শটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রায় দুই হাজার কার্ড কোটায় হাতিয়ে নেয়। তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে সাড় ৫ হাজার কার্ডের মধ্যে বিএনপি ৬শ, জামায়াত, জেএসডি নাগরিক পার্টি ও খেলাফত মজলিস দেড়শ করে কার্ড বরাদ্দ পেয়েছে। চরমার্টিন ইউনিয়নে বরাদ্দ ৬ হাজার কার্ড। এর মধ্যে বিএনপি ৮৫০, জামায়াত ও জেএসডি দেড়শ করে কার্ড নিয়েছে। ইউনিয়নটির প্রশাসক হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিপু সুলতান রেখেছেন ৭শ কার্ড।
এছাড়াও, চরকাদিরা ইউনিয়নে সাড়ে ৭ হাজার কার্ড বরাদ্দ হয়। এর মধ্য বিএনপি ৯শ’, জামায়াত ৫শ’ ও জেএসডির জন্য ৪শ’টি কার্ড দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন থাবার ফলে প্রকৃত দুস্থ মানুষ সরকারি বিশেষ সুবিধা থেকে বাদ পড়বেন। তাদের ভাষ্য, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ভিজিএফের কার্ড যেন দুস্থদের জন্য নয়; দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, কার্ড বিতরণের সময় এলে দলীয় কোটা রাখা একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। শুধু ঈদে নয়; জেলেদের ভিজিএফসহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দে রাজনৈতিক দলের নেতারা হস্তক্ষেপ করছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ও এ প্রথা চালু ছিল। বর্তমানে এ ‘কোটার’ হার অনেক বেড়েছে।
উপজেলার চরমার্টিন ইউপির প্রশাসক ও উপজলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, বাধ্য হয়েই রাজনৈতিক দলের জন্য ওইসব কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিজর নামে ৭শ কার্ড রাখার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, আমি কিছু নাম রেখেছি। যাতে গরিব-অসহায় মানুষকে দিতে পারি।
চরকাদিরা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, নির্দিষ্ট সংখ্যক কার্ড নিজেদের জন্য বরাদ্দ রাখতেই হয়। না হলে চেয়ারম্যানি করাই কঠিন হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, জামায়াতে ইসলামী সব সময় কোটার বিরুদ্ধে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম কাদের বলেন, দলীয়ভাবে আমরা আগে থেকেই এই ধরনের কোটার বিরুদ্ধে। কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কোটা সিস্টেমে কার্ড নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা সুজন সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, কোটা প্রথাকে কেন্দ্র করে দেশে এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও সেই প্রথা এখনও চালু থাকা খুবই দুঃখজনক। ইউএনও মো. রাহাত উজ জামান বলেন, আমি এ উপজলায় নতুন এসেছি।