Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিএনপির শেল্টারে আ.লীগ নেতাদের বালু উত্তোলন

Icon

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৯ এএম

বিএনপির শেল্টারে আ.লীগ নেতাদের বালু উত্তোলন

ছবি: সংগৃহীত

দখল-দূষণ আর অবৈধ বালু উত্তোলনে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নবীগঞ্জে কুশিয়ারা ও শাখা বরাক নদী। দেশে পটপরির্তনের পর স্থানীয় বিএনপি-যুবদলের কতিপয় নেতার ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ নেতারাই কুশিয়ারা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। 

ফলে হুমকির মুখে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরে অবস্থিত প্রতিরক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অন্যদিকে শাখা বরাক নদীতে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে শহরের সব ময়লা-আবর্জনা। 

জানা যায়, উপজেলার আউশকান্দি ও দীঘলবাঁক ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী কসবা, দুর্গাপুর, পাহাড়পুর, পারকুল, শেরপুর বাজারের নিকটবর্তী স্থানসহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। উত্তোলনকৃত বালু চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতিট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে। 

জানা গেছে, আ.লীগ সরকারের আমলে কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন দলের নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল মতিন আছাব, রনি, দুলালসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। দেশে পটপরিবর্তনের পর উপজেলা বিএনপির এক সাবেক জনপ্রতিনিধি ও যুবদলের কতিপয় নেতাদের ওপর ভর করে আ.লীগের নেতারাই ঘুরেফিরে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ করছেন। 

কুশিয়ারা নদীর নবীগঞ্জ উপজেলার অংশ থেকে দিনদুপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিনিয়ত নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে নদীর উভয় তীরে নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

অন্যদিকে একসময়ের উত্তাল স্রোতের শাখা বরাক নদী কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ফিরে পেতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও সভা করেও কোনো সুফল মিলছে না এলাকাবাসীর। রাঘববোয়ালদের দখলে রয়েছে বরাক নদীর চরাঞ্চল। দখল ও দূষণের ফলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। 

এতে সড়কগুলো অকালেই ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগও রয়েছে। যদিও চলতি বছরে পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ড্রেন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কের ১নং ব্রিজের নিচ দিয়ে যে খালটি শিবপাশা ঠাকুরপাড়ার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেটি নোয়াপাড়া-শাখা বরাক নদীতে মিলিত হয়েছে। এ স্থানের অনেকটাই এখন দখলদারদের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় শত কোটি টাকার ডিসির খতিয়ানভুক্ত খাস ভূমি দখল নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 

ঐতিহ্যবাহী শাখা বরাক নদীটি কালের আবর্তে দখলদারদের কবলে পড়ে একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এসব যেন দেখার কেউই নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। অন্যদিকে শাখা বরাক নদী করা হয়েছে দখল। এছাড়া বরাকে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। দীর্ঘদিন ধরে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে সরব প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ ও শাখা বরাক নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ শাখা বরাক নদী থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোভাবেই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম