Logo
Logo
×

সারাদেশ

ছেলেকে ফেরত পেতে নিখোঁজ ছাত্রদলকর্মী ইয়াসিনের মায়ের আকুতি

Icon

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৯ এএম

ছেলেকে ফেরত পেতে নিখোঁজ ছাত্রদলকর্মী ইয়াসিনের মায়ের আকুতি

নিখোঁজ ছাত্রদলকর্মী ইয়াসিন মিয়া ও তার মা সুলতানা আক্তার। ছবি: যুগান্তর

‘আমার ছেলেটা নিখোঁজ হয়েছে আজ ৭ দিন। ছেলেটাকে খুঁজতে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ঘুরতেছি। কিন্তু কেউ কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করতাছে না। আমরা তো স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমার ছেলেও তো এই দেশেরই নাগরিক। তাহলে তাকে খুঁজতে কেউ সাহায্য করে না কেন? জীবিত অথবা মৃত তোমরা কেউ আমার ছেলেকে এনে দাও। 

শুক্রবার নিজ বাড়িতে এভাবে কথাগুলো বলে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী রসূলপুর ঘাটে সংঘর্ষে নিখোঁজ ইয়াসিনের মা সুলতানা আক্তার। 

নিখোঁজ ইয়াসিন মিয়া (২০) জেলার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের রূপচান মিয়ার ছেলে। 

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইয়াসিন মিয়া ছাত্রদলের একজন কর্মী ছিলেন। জীবিকার তাগিদে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে পরিবার চালাতেন তিনি। গত শনিবার (৮ মার্চ) নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার রসূলপুর ঘাটে যাত্রী নিয়ে গিয়েছিল ইয়াসিন। সেখানে স্থানীয় ও মাছ শিকারিদের মাঝে সংঘর্ষে নিখোঁজ হন তিনি। 

এ ঘটনায় ইয়াসিনের মামা (১০ মার্চ) মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু স্বজনদের অভিযোগ, নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ প্রশাসনের কাছে বার বার গিয়েও কোনো সহযোগিতা মিলছে না।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বলে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছ শিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরির বিভিন্ন জলমহালে মাছ শিকার করছিলেন। গত শনিবার সকালে সহস্রাধিক মাছ শিকারি পলো নিয়ে একটি জলমহালের মাছ শিকার করতে যান। মাছ শিকারিরা ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ রেখে নদ পার হতে ফেরি নৌকায় যেতে চাইলে রসুলপুর গ্রামের লোকজন তাদের বাধা দেন। 

এর জেরে মাছ শিকারিদের সঙ্গে রসুলপুর ও জগন্নাথপুর গ্রামের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের শতাধিক লোক আহত হন। এছাড়া যানবাহন ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ৪ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়। সংঘর্ষের ৩ দিন পর ধনু নদ থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনার মর্গে পাঠায় লিপসার নৌ পুলিশ।

নিহতরা হলেন, মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুছের ছেলে রোকন মিয়া (৪৮), আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (৫০) ও কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে হৃদয় মিয়া (২৮)। 

নিহত রোকন মিয়ার ভাই খোকন মিয়া জানান, ‘আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করে ধনু নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। জগ্ননাথপুর ও রসূলপুর লোকজনের জন্য লাশটি খুঁজতে পর্যন্ত যেতে পারিনি। সোমবার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। আমরা হত্যা মামলা করব’। 

নিখোঁজ ইয়াসিনের মামা জুলহাস মিয়া বলেন, ‘ঘটনার পরদিন আমি খালিয়াজুরী থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। তাই নেতাকর্মীদের অনুরোধ করে মদন থানায় ডায়েরি করেছি। জীবিত অথবা মৃত যেই অবস্থায় হোক আমরা ইয়াসিনের সন্ধান চাই।’ 

এ বিষয়ে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, ‘গত শনিবার খালিয়াজুরী উপজেলার রসূলপুর ফেরিঘাটে সংঘর্ষে ইয়াসিন নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনাটি যেহেতু খালিয়াজুরী থানায় তাই ওই থানার পুলিশ বিষয়টির ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ইয়াসিনের স্বজনরা খালিয়াজুরী থানায় যায়নি। তবে এ ঘটনায় মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের পর তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইয়াসিনের নিখোঁজের ব্যাপারে থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি’। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম