
১-২ টাকা দামেই বিক্রি হয় ইফতারের প্রায় সব সামগ্রী। তিন বছর ধরে এভাবেই সস্তা কিন্তু মানে ভালো-এমন ইফতার পণ্য নিয়ে রোজাদারদের সামনে হাজির থাকছেন মাহমুদ হোসেন আকাশ। দাম কম বলে পণ্যের মান যে খারাপ তা কিন্তু নয়।
তৃপ্তির সব উপাদান দিয়েই তৈরি হয় ‘সম্রাট ইফতারি ঘর’ নামে আকাশের এই দোকানের ইফতার। বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন ভিড় জমান তার দোকান থেকে ইফতার কিনতে। যে ভিড়ে থাকে না ছোট-বড় কিংবা ধনী-গরিবের ভেদাভেদ।
বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ী রোডে অবস্থান সম্রাট ইফতারি ঘরের। যেখানে ১ টাকা দরে মেলে আলু আর কলার চপ। পিঁয়াজু, সবজি বড়া, বেগুনি আর কুমড়ার চপ পাওয়া যায় প্রতি পিস ২ টাকায়। এছাড়া ছোলা-মুড়িসহ ইফতারের নিয়মিত আয়োজনের অন্যান্য উপাদানও প্রায় এই দামেই ক্রেতাদের দেন দোকানি মাহমুদ।
শুধু ১-২ টাকার ইফতার পণ্য নয়, সম্রাট ইফতারি ঘরে পাওয়া যায় ‘গরুর ঝাল টমেটো’, গরুর মাংসের সাসলিক, চিকেন সাসলিক, ডিমের চপসহ আরও নানা মজাদার খাবার। এসব খাবারের দাম খানিকটা বেশি হলেও নগরীর অন্যান্য হোটেলের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। টানা তিন বছর ধরে ইফতারের এসব সামগ্রী বিক্রি করছেন মাহমুদ।
বছরের অন্য সময়ে চালান খাবার হোটেল। কথা প্রসঙ্গে দোকানি মাহমুদ বলেন, হোটেলেও অনেক কম দামে খাবার বিক্রি করি আমি। এটা চলে সারা বছর। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, আমার চেয়ে কম দামে এই মানের খাবার বরিশালে আর কোনো হোটেলে বিক্রি হয় না। হোটেল ব্যবসা করতে গিয়ে দেখেছি, মান ভালো আর দাম কম বলে প্রচুর মানুষ খেতে আসেন। এতে অন্যদের তুলনায় বিক্রি যেমন বেশি হয় তেমনি লাভও থাকে বেশি।
এখানে লাভটা আসে বেশি বিক্রি থেকে। এই হিসাব থেকে রমজানে রোজাদারদের জন্য কম দামের ইফতারির দোকান। পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে রোজার সময় দাম কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা কিন্তু আমাদের দেশে হয় উলটো। বৃহস্পতিবার বিকালে ফকির বাড়ি রোডে মাহমুদের ইফতারির দোকানে গিয়ে চোখে পড়ে মানুষের ভিড়। সবাই এসেছেন ইফতার কিনতে। ১-২ টাকা দরে যেমন বিক্রি হচ্ছে ইফতারসামগ্রী, তেমনি খানিকটা বেশি দামে অন্যান্য মজাদার খাবারও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন মানুষ।
ইফতার নিতে আসা নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা মফিজুর রহমান মিন্টু বলেন, দামের চেয়েও দোকানির উদ্যোগটা বেশি ভালো লেগেছে আমার। রোজাদারদের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন তিনি। এ কারণে ৩-৪ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি ইফতার নিতে। ইফতার কিনতে আসা পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা আব্বাস ব্যাপারী বলেন, বাইরে তো একটা পিঁয়াজু ৫-১০ টাকায় বিক্রি হয়।
অন্যান্য জিনিসের দামও বেশি। এত টাকা খরচ করে ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই। কম দামে বিক্রি হয় শুনে এখানে এসেছি। ২৫ টাকায় যা পেয়েছি তাতে স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে আমাদের ইফতার হয়ে যাবে।