বগুড়ায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা মতিনকে ১৩ বছরের সাজা

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

বগুড়ায় জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আবদুল মতিন সরকারকে পৃথক ধারায় ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাকে দুই কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অবৈধভাবে অর্জিত একই অংকের টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বগুড়ার স্পেশাল জজ মো. শহীদুল্লাহ মঙ্গলবার দুপুরে আসামির অনুপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
দুদকের পিপি এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, দুটি রায় আলাদাভাবে চলবে। গ্রেফতারের পর তার সাজা কার্যকর হবে।
আদালত ও মামলা সূত্র জানায়, আবদুল মতিন সরকার বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুরের মজিবর রহমানের ছেলে ও আলোচিত তুফান সরকারের বড় ভাই। ২০১৭ সালে কলেজে ভর্তির নামে এক ছাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ, নির্যাতন ও মা সহ তাকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ তার ভাই তুফান সরকারকে গ্রেফতার করে।
এ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হলে জেলা যুবলীগ শহর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মতিন সরকারকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর মতিন সরকার ও তুফান সরকারের বিভিন্ন অপরাধ, অপকর্ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি হয়।
দুদক বগুড়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হন যে মতিন সরকার এক কোটি ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত দুই কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
দুদক বগুড়া কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম গত ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজ কার্যালয়ে মতিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি নিজে তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দেন। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আদালত চার্জগঠন করেন।
এর আগে আদালত ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ ক্রোক, তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন।
দুদকের পিপি এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, মতিন সরকারের এ মামলায় ১৩ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারার অপরাধে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৭ (১) ধারায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলা চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মতিন সরকার আত্মগোপন করেন। গ্রেফতারের পর তার উভয় সাজা আলাদাভাবে কার্যকর হবে। এ ছাড়া আদালত জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ দুই কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছেন। আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান মামলা পরিচালনা করেন।