Logo
Logo
×

সারাদেশ

এক ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধ বিক্রি

Icon

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

এক ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধ বিক্রি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে প্রতিদিন সকালে বসে একটি বিশেষ দুধের হাট; যা স্থানীয়ভাবে ‘এক ঘণ্টার বাজার’ নামে পরিচিত। 

প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টার এই বাজারে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ লিটার দুধ কেনাবেচা হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় আট লাখ টাকা। মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মতো দুধ বিক্রি হয়। 

ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাড় থেকে প্রায় ৪শ কিষাণ কিষাণীরা দুধ নিয়ে বাজারে আসেন। ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড়ে গোপালপুর বাজার। এই বাজারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় ১৫টি গ্রামের ৩০০ থেকে ৪০০ ছোট-বড় খামারি। তারা সবাই গাভি পালন করে দুধ উৎপাদন করে এই বাজারে এনে বিক্রি করেন। প্রতি কৃষকের বাড়িতে ৫ থেকে ১০টি গাভি রয়েছে, যা তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। দুধের পাইকাররা এই দুধ কিনে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন। 

জানা গেছে, ৮০ দশকের শুরুর দিকে গোপালপুর বাজারের আশপাশে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাজার ছিল না। নিজেদের জমির ফসল ও গাভির দুধ বিক্রি করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো কয়েক গ্রামের কৃষক ও খামারিদের । নৌকায় করে উপজেলা সদর সাটুরিয়ায় যেতে হতো তাদের পণ্য বিক্রির জন্য; যা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। 

১৯৮৫ সালে বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান গজী মো. আব্দুল হাই গোপালপুর গ্রামে কিছু জমি কিনেন। পরে ওই বছরের শেষের দিকে সেই জমিতে হাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। গ্রামের কৃষকেরা উৎপাদিত ফসল, দুধ ও কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করা শুরু করে। ধীরে ধীরে কয়েক গ্রামের মানুষ ওই বাজারে পণ্য বেচাকেনা শুরু করে। শুরুর দিকে গোপালপুর বাজারের আশপাশের মানুষ এসব দুধের ক্রেতা ছিলেন। এতে তারা আশানুরূপ দাম পেতেন না। 

নব্বই দশকের শুরু থেকেই এই বাজারে দুধ কেনাবেচা শুরু হয়। স্থানীয় পাইকাররা এই বাজার থেকে দুধ কিনে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করতেন। 

চেয়ারম্যান গাজী মো. আবদুল হাই বলেন, শুরুর দিকে আমি এই বাজারের জমিটি কিনি। পরে বাজারের জন্য জমিটি দান করে দেই। এখন সারা দেশে এই দুধের বাজারের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

তবে এই বাজারে আসতে খামারিদের বেশ কষ্ট পেতে হয়। ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিমপাড়ের রাজৈর, বরাইদ, কাকরাইদ, গালা, তিল্লির চর, নাটুয়াবাড়ীসহ আশপাশের গ্রাম থেকে খেয়া নৌকায় পার হয়ে দুধ নিয়ে আসতে হয়। নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে তাদের এই কষ্ট করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য। 

তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এ সমস্যার সমাধানে কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে। সফল হওয়ার পর সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

সেতু নির্মাণ ও বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন হলে এ অঞ্চলের দুধ ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

গোপালপুরের এই দুধের বাজার স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিদিনের দুধ বিক্রির আয় দিয়ে খামারিরা তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মানসম্মত দুধ সরবরাহ করছেন। সেতু নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন এই অঞ্চলের দুধ উৎপাদন ও বিপণনকে আরও সহজতর করবে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম