পণ্যের ভাসমান গুদাম, ১০৮৫ জাহাজকে সীমানা ত্যাগে বাধ্য

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম

লাইটার জাহাজকে ভাসমান গুদাম বানিয়ে পণ্য মজুত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ ওঠার পর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে অভিযান শুরু করেছে কোস্টগার্ড। যৌক্তিক কারণ ছাড়া পণ্য নিয়ে কোনো লাইটার জাহাজ অবস্থান করলে সেসব জাহাজকে বন্দর সীমানা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
কয়েক দিনের অভিযানে এ ধরনের ১ হাজার ৮৫টি লাইটার জাহাজকে বন্দর সীমানা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে কোস্টগার্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অভিযানের ধারাবাহিকতায় সোমবারও কোস্টগার্ডের জাহাজ ও দ্রুতগামী মেটাল শার্ক বন্দরের বহির্নোঙরের আলফা ও ব্রাভো অ্যাংকরেজে অভিযান পরিচালনা করেছে।
কোস্টগার্ড সূত্র জানিয়েছে, নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ড নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবে পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এ অভিযানের আওতা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মূল্য বাড়ানোর হীনউদ্দেশ্যে কোনো কোনো আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী লাইটার জাহাজকে ভাসমান গুদাম বানিয়ে রাখে। এমন অভিযোগ বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে। মূলত এ অভিযোগের পর কোস্টগার্ড যৌক্তিক কারণ ছাড়া পণ্য নিয়ে সাগরে ভেসে আছে- এমন লাইটার জাহাজের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
বন্দরের বহির্নোঙরে অভিযান পরিচালনাকালে সোমবার এ ধরনের কোনো জাহাজের সন্ধান না পেলেও এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযানে ১ হাজার ৮৫টি জাহাজকে বন্দর সীমানা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
কোস্টগার্ড জানায়, এমন অভিযানের ফলে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ আর অকারণে বন্দরে অবস্থান করছে না। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলারে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দর সীমানা ত্যাগ করার নির্দেশনা দেয়।
প্রসঙ্গত, আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে খালাস করে লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) ভর্তি করে বন্দরের বিভিন্ন জেটি ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয় যাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা লাইটার জাহজকে সাগরে ভাসিয়ে রেখে এবং যথাসময়ে খালাস না নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ আছে। আর এই সংকটের ফলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তার সুবিধা ভোগ করেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামসহ দেশে ভোজ্যতেলের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে এর নেপথ্যে লাইটার জাহাজে ভোজ্য তেল মজুত করে রাখাকে দায়ী করেছেন অনেকে।
অভিযান প্রসঙ্গে কোস্টগার্ডের জাহাজ বিসিজিএস সবুজ বাংলার অধিনায়ক লে. কমান্ডার সালমান সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, রোজায় যাতে বাজারে খাদ্য ঘাটতি না হয়, সরবরাহ চেইন ঠিক থাকে এবং কোস্টগার্ডের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় যাতে কোনো ধরনের খাদ্য মজুত না থাকে সে লক্ষ্যে তারা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছেন। কেবল চট্টগ্রাম বন্দর বা বহির্নোঙর নয়; চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ নৌপথে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।