ধর্ষণের পর সালিশে কিশোরীকে অপবাদ, অতঃপর...

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সালিশ বৈঠকে ওই কিশোরীকে দেওয়া হয় অপবাদ। এর পর বাড়িতে গিয়ে ওই কিশোরী ও তার মাকে মাথার চুল কেটে গ্রাম ঘোরানোর হুমকি দেয় যুবক। এতে লোকলজ্জায় ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনায় মামলার পর ধর্ষক রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে কুমিল্লা জেলা শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দুপুরে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি কবির হোসেন জানান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ধর্ষক রাকিবের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার ঘটনায় এর আগে মো. হেলাল নামে একজনকে গ্রেফতার করে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
রাকিব উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চরকলাকোপা গ্রামের খবির উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১ মার্চ ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে। কিন্তু সেখানে কোনো বিচার পায়নি কিশোরী। উল্টো তাকে অপবাদ দেওয়া হয়। ৬ মার্চ সকালে কিশোরীকে বাড়িতে রেখে মা বাড়ির পাশের জমিতে ফসল দেখতে যায়। তখন সালিশ বৈঠকে থাকা হেলাল বাড়িতে ঢুকে কিশোরীসহ তার মাকে চুল কেটে এলাকায় ঘোরানোর হুমকি দেয়। এতে মানসিক চাপে দুপুরে সে আত্মহত্যা করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ৭ মার্চ ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে রামগতি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাকিবসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন— মো. আজাদ, জামশেদ উদ্দিন ও মো. বাশারসহ ১০ জন। তারা পশ্চিম চরকলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত রাকিবের সঙ্গে প্রায় ৭ মাস ধরে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এতে ১ মার্চ রাতে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে রাকিব ধর্ষণ করে। ঘটনাটি কিশোরীর মা টের পেয়ে ঘরে ঢুকলে রাকিব পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি ভুক্তভোগী পরিবার রাকিবের বাবা-মাকে জানায়। এতে তারা কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করে। কিন্তু পরদিন ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়।
এতে মামলায় অভিযুক্তরাসহ একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে ধর্ষণের ঘটনায় কোনো বিচার করা হয়নি। উল্টো কয়েকজন কিশোরীকে অপবাদ দেয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মামলায় গ্রেফতার হেলাল বাড়িতে ঢুকে কিশোরীসহ তার মাকে চুল কেটে গ্রামে ঘোরানোর হুমকি দেয়। এটি সহ্য করতে না পেরে কিশোরী আত্মহত্যা করে।