৫০ হাজারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ এএম

সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য মাতবরা ভুক্তভোগীর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসায়। ওই বৃদ্ধকে করা হয় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। মাতবরদের রায় মেনে নিয়ে দুই হাজার টাকা দেনও অভিযুক্ত। কিন্তু এতে বিধিবাম ঘটায় যৌথ বাহিনী। খবর পেয়ে রাতেই সেই বাড়িতে হাজির হয় তারা। ভুক্তভোগী শিশুর মুখে শুনে আটক করা হয় অভিযুক্তকে।
ঘটনাটি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ভুশ্চি গ্রামের।
গত শনিবার সালিশি বৈঠক বসেছিল। আর রোববার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মামলা করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, কুকুর দিয়ে কামড়ানো হবে এমন ভয় দেখিয়ে শিশুটির
ওপর যৌন নির্যাতন চালায় ওই বৃদ্ধ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিশুটি স্থানীয় একটি মহিলা মাদ্রাসার
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার পথ আটকায়
বৃদ্ধ আবাদ উল্যাহ। কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে ভুশ্চি গ্রামের একটি পরিত্যক্ত রান্না
ঘরে শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে ওই বৃদ্ধ। ১০ দিনের ব্যবধানে একইভাবে শিশুটিকে তিনি
তিনবার ধর্ষণ করেন। গত ৭ মার্চ দুপুরে বাড়ির অন্য শিশুদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে
ভুক্তভোগীর মা। শিশুটিকে তার মা জিজ্ঞাসা করলে সে ধর্ষণের বর্ণনা দেয়।
ভুক্তভোগীর চাচা বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার রাতে সালিশি বৈঠক বসে। সেদিন
রাতে মাতবরদের নির্দেশে আবাদ উল্যাহকে গ্রামের কয়েকজন ছেলে তাকে একটি চা দোকান থেকে
ডেকে নিয়ে আসে। বৈঠকে দুপক্ষের জুড়িদাররা একমত হয়ে বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
তার পক্ষে দুই হাজার টাকা জমা করে রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। খবর পেয়ে রাত ২টায় যৌথবাহিনীর
সদস্যরা আসলে সালিশি বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। অভিযোগের বর্ণনা শুনে তারা বৃদ্ধকে আটক করে
থানায় নিয়ে যায়।
সালিশি বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্তাজ ভুঁইয়ার
সভাপতিত্বে ও আবদুস ছোবহানের পরিচালনায় সালিশে বৃদ্ধের পক্ষে জুড়িদার ছিলেন ফজলুর রহমান
মিন্টু এবং জাকির হোসেন। আর শিশুটির পক্ষে ছিলেন আবদুল মালেক ও মানিক মিয়া। গ্রামের
অন্য গণ্যমান্যরাও উপস্থিত ছিলেন।’
বৈঠকে থাকা ফজলুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘গ্রামের গণ্যমান্যদের নিয়ে বিষয়টি
মীমাংসা করতে শনিবার রাতে সালিশি বৈঠক হয়েছে। শিশুটির ওষুধ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা
রায় করেছিল বিচারকরা।’
ভুশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই রেদোয়ান হোসেন বলেন, ‘খবর
পেয়ে আমরা যৌথবাহিনী শিশুটির বাড়িতে যাই। ভিকটিম ও তার পরিবারের কথা শুনে আমরা বৃদ্ধকে
আটক করে থানায় নিয়ে আসি। আমরা যাওয়ার আগে বাড়ির উঠোনে সালিশ বৈঠক চলছিল বলে শুনেছি।’
লালমাই থানার ওসি শাহ আলম বলেন, ‘শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৭০ বছরের এক
বৃদ্ধকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় ওই
বৃদ্ধকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ভিকটিমের মেডিকেল চেকআপের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

