
ঘোড়ার গোশত বিক্রি করে আলোচনায় গাজীপুর মহানগরের হায়দারাবাদ এলাকার দুই বন্ধু মো. শফিকুল ইসলাম ও নূরুল্লাহ মামুন। জামালপুর ও রংপুর থেকে অল্প টাকায় ঘোড়া কিনে এনে ৩শ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেন ঘোড়ার মাংস।
চর্বি ছাড়া ও স্বাদে-গন্ধে অনেকটা গরুর মাংসের সঙ্গে মিল থাকায় এবং কম দামে কিনতে পারায় অনলাইনে এর ব্যাপক গ্রাহক চাহিদা বেড়েছে।
শুরুতে সপ্তাহে ১-২টি ঘোড়া জবাই করা হলেও এখন প্রতি শুক্রবার ১০ থেকে ১২টি ঘোড়া জবাই হচ্ছে। আগামী শুক্রবার আরও চাহিদা বাড়বে বলে জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম জানান, গরুতে চর্বি আছে, এটাতে কোনো চর্বি নেই। খেতেও গরুর মাংসের চেয়ে আরও সুস্বাদু। খাওয়ার পরে হাত ধুইতে সাবান লাগে না। প্রথমে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতাম এখন বিক্রি করি প্রতি কেজি ৩শ টাকা।
ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল নিয়ে তিনি বলেন, আমি মুফতি মাওলানাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমার কাছেও সহি হাদিস কিতাবের বই আছে। এতে পড়ে দেখেছি ঘোড়ার মাংস খাওয়া জায়েজ আছে। আমার বন্ধু বিদেশে দেখেছে ঘোড়ার মাংস দোকানে বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে এলাকার মানুষ সমালোচনা করত, এখন আর কেউ কিছু বলে না। তবে এলাকার মানুষ খুব কমই নেয়, দূর-দূরান্ত থেকে অনলাইনেই বেশি বুকিং করা হয়।
রোববার দুপুরে হায়দারাবাদ তাকওয়ানগর (আত তাকওয়া মাসজিদ ও মাদ্রাসা) এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, স্থানীয় মান্নান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি তোলার গোডাউনের দক্ষিণ পাশের একটি মাঠে মাঝারি আকারের হালকা, শুকনা, মেদি ও বেটা জাতের ৬টি ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে। রাস্তার পাশেই একটি গাছের ছায়ায় ওই গোডাউনের কর্মচারী মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম, দুলাল মিয়া ও সোহেল রানা বসে গল্প করছেন।
এ সময় তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, প্রতি শুক্রবার আট-দশটা করে ঘোড়া জবাই করা হয়। অনলাইনে এর গ্রাহক বেশি, শুনছি আগামী শুক্রবার আরও বেশি জবাই হবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দূর থেকে তারা অসুস্থ বা রিজেক্ট ঘোড়া নামমাত্র মূল্যে ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়াগুলো নিয়ে আসেন। পশু জবাইয়ের পূর্বে প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিতে হয়; কিন্তু তারা একটা ঘোড়া জবাই করে বিক্রি করতে পারে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। অনলাইনে অর্ডার করে গ্রাহকরা গাড়ি, মোটরসাইকেল বা বিভিন্ন যানবাহনে ২০ কেজি ৩০ কেজি এমনকি একজনে একাই একটি ঘোড়ার মাংস নিয়ে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে- বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের আদলে বা মিক্সড করে বিক্রি করছে।
শফিকুল ইসলামের ভাতিজা সানি (১২) জানান, জামালপুর থেকে একসঙ্গে ২০-৩০টা করে ঘোড়া নিয়ে আসে। তার চাচা শফিকুল ইসলামই কসাই নিয়ে ঘোড়াগুলো জবাই করেন। কোনো ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় না।
শফিকুল ইসলামের ছেলে শাহেদ আলী জানান, আমরা এখন শুরু থেকেই অনলাইনে অর্ডার নেই। কিছুদিনের মধ্যে অর্ডার নিয়ে আমরা লোক দিয়ে নিজেরাই ডেলিভারি শুরু করব।
তিনি বলেন, রান্না করার পরে বোঝার উপায় নেই এটি কি গরুর মাংস নাকি ঘোড়ার মাংস।
তিনি আরও জানান, ঘোড়া জবাইয়ের পর পুরোপুরি বিক্রি না হলে আমাদের ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা আছে; কেউ চাইলে পরেও নিতে পারবেন।
গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার হারুনুর রশিদ জানান, হায়দারাবাদে ঘোড়া জবাইয়ের বিষয়টি শুধু শুনি। নিয়মানুযায়ী পশু জবাইয়ের পূর্বে সুস্থ কিনা এর জন্য ডাক্তারি সার্টিফিকেট আমাদের কাছ থেকে নিতে হয়; কিন্তু ঘোড়া জবাইয়ের বিষয়ে কোনো সার্টিফিকেট তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি।
গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি কামরুল ইসলাম নোমানী জানান, এটার ব্যাপারে মাসালা হলো- মাখরুহা তানজিম। তবে হাদিসে আছে ঘোড়ার মাংস খাওয়া জায়েজ আছে; কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত কেউ ঘোড়ার মাংস খায় না, ইচ্ছা করলে বা রুচিতে ধরলে খাইতে পারবেন।