Logo
Logo
×

সারাদেশ

জামায়াতের ২ কর্মী হত্যার ৫ দিন পর মামলা, সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ আসামি ৬২

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

জামায়াতের ২ কর্মী হত্যার ৫ দিন পর মামলা, সাবেক দুই  চেয়ারম্যানসহ আসামি ৬২

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় হামলায় জামায়াতের দুই কর্মী নিহত হওয়ার ৫ দিন পর সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁতী লীগের  এক নেতাসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার দায়ের করা এ মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত আবুল ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সালিশি বৈঠকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে বাদী উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনায় আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলায় আসামিরা হচ্ছেন- মোহাম্মদ হারুন, মো. মমতাজ, কামরুল ইসলাম, আজিজুল হক, নজরুল ইসলাম মানিক (এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান), মাহমুদুল হক, আবু সামা, মো. সাজ্জাদ, মো. মিজান প্রকাশ পিচ্চি মিজান, মো. কফিল, সোহেল আহমদ, মো. বেলাল, মো. হেলাল, মো. হামিদ, মো. ইছহাক, মো. মোজাফ্ফর মেম্বার, প্রকাশ জুইন্না, কমরু, মো. সিফাত, মো. সালাম, মো. আলম, মিজানুর রহমান মারুফ, রমজান আলী (কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান), হোসাইন কবীর, মো. ইউনুছ, মো. নেজাম, মো. জসিম, মো. ফারুক প্রকাশ কালা ফারুক, মো. মোরশেদ, শহিদুল্লাহ, সালা উদ্দিন, মো. খোকন, মো. এমরান, মো. খলিল, সৌরভ হোসেন মিন্টু (সাতকানিয়া উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি), মো. মনি, মোখলেছুর রহমান জাকের, মো. মোর্শেদ, মো. ওসমান, আবু তাহের, শাহজাহান প্রকাশ মীম, মো. কায়ছার, মো. নাছিম, মো. ফয়সাল, নজরুল ইসলাম, মো. জহির ও মো. জাকির হোসেন প্রকাশ কালা জাকির।

মামলায় নিহতদের জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী ও আসামিদের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থক বলে দাবি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে যা আছে- গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আবদুল নূর নামে এক ব্যক্তির সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম আবদুল নূর হত্যাকাণ্ডের শিকার আবুল ছালেক  ও নেজাম উদ্দিনকে মীমাংসা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তারা গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঘটনাস্থল বা ছনখোলা এলাকায় বৈঠক করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে ও ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেন নেজা ও ছালেকসহ অন্যরা। কিন্তু ৭ লাখ টাকা জরিমানা ভিকটিম আবদুল নূর সন্তুষ্ট না হওয়াতে আবারও ৩ মার্চ বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। ৩ মার্চ রাতে ছালেক ও নেজামসহ ঘটনাস্থলের পাশে থাকা জনৈক হারুনের চায়ের দোকানে আসামি আজিজুল হক, সাজ্জাদ, মিজান প্রকাশ পিচ্চি মিজান ও সোহেলের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা পোড়ানের বিষয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনা করার একপর্যায়ে আজিজুল হক, ইছহাক ও পিচ্চি মিজান লোহার রড ও অস্ত্র নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করে। তখন ইছহাকের হাতে থাকা লোহার রড দ্বারা নেজাম উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাহার মাথার পেছনে আঘাত করেন। আজিজুল হক তার হাতে থাকা লোহার খন্তা দিয়ে নেজাম উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার পেছনে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। ছালেক গুরুতর আহত নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে আজিজুল ও ইছহাক তাদের হাতে থাকা লোহার রড ও লোহার খন্তা দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করে।

একপর্যায়ে হারুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত নজরুল ইসলাম মানিকের পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহেল আহমেদ ছনখোলা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে গিয়ে মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে বলে গুজব ছড়াতে বলেন। সোহেল তাৎক্ষণিক মসজিদের মাইকে হারুনের চায়ের দোকানে ডাকাত এসেছে বলে এলাকার স্থানীয় লোকজনকে উসকানি দিতে থাকে। তখন স্থানীয় অনেক লোকজন ডাকাত মনে করে ছালেক ও নেজামকে মারধর শুরু করেন।

এ সময় হারুনের নির্দেশে অন্য আসামিরা আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে টানাহেচঁড়া করে হারুনের চায়ের দোকান হতে বের করে রাস্তার বিপরীত পাশে একটি টিনের ঘরে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। তখন হারুন, মাহমুদুল হক, সাজ্জাদ, পিচ্চি মিজানসহ অন্যরা হাতে থাকা রাম দা, ছুরি, চাইনিজ কুড়াল ও ধারালো কিরিচ দ্বারা নেজাম উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার মুখে, মাথায়, কপালে, পায়ে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। বেলাল নামে একজন পা দিয়ে গলা চেপে ধরে নেজামের মৃত্যু নিশ্চিত করে বলে দাবি করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়- নেজামের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর হারুন, মাহমুদুল হক, সাজ্জাদসহ অন্যরা তাদের হাতে থাকা রামদা, কিরিচ ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আবু ছালেককে রাস্তার ওপর এনে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার মাথায়, মুখেসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। মো. ইছহাক অজ্ঞাতনামা আসামিদের কাছ থেকে একটি ধারালো ছোরা নিয়ে  আমার স্বামীর জিহ্বা কেটে গুরুতর জখম করে। পরে রমজান আলী, নেজাম ও কালা ফারুকসহ অন্যরা লোহার রড ও গাছের লাঠি দিয়ে আবু ছালেককে এলোপাতাড়ি মেরে হাতে, পায়ে, কোমরে, পিঠে, কাঁধেসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ফুলা ও থেঁতলানো জখম করে। একপর্যায়ে হারুন তার কোমর হতে পিস্তল বের করে গুলি করে আবু ছালেকের মৃত্যু নিশ্চিত করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম জানান, নিহত ছালেকের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি এজাহার দিয়েছেন। সেখানে ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম