অডিও ভাইরাল
‘ওসি টাকা ছাড়া দুনিয়াত আর কিছু দেখে না’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুন-নবীর বিরুদ্ধে ‘মামলা বাণিজ্যের’ অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ঘটনার ৭ মাস ১৭ দিন পর করা একটি মামলা এবং বাদীর কল রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা চলছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, ‘চাহিদামতো টাকা না পেয়ে’ ওই মামলায় অনেক নিরীহ মানুষকে জড়ানো হয়েছে। এমনকি ‘আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে হামলার’ অভিযোগে করা সেই মামলাটিতে বিএনপির লোকজনকেও আসামি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৩ মার্চ ৪৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। তদন্ত ছাড়া ওসি ওইদিনই মামলাটি নথিভুক্ত করেন।
মামলার বাদী উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের মো. শহিদুল্লার ছেলে মো. আব্দুর রহিম। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত আব্দুর রহিম একটি টেভি চ্যানেলের স্থানীয় প্রতিনিধি।
এজাহারে বলা হয়, ১৮ জুলাই হাতীবান্ধা কৃষি ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগের একটি মিছিলের ভিডিও ধারণ করার সময় হামলার শিকার হন আব্দুর রহিম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলায় ২৩ নম্বর আসামি মো. মমিনুর ইসলাম মমিন উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি। ৪৫ নম্বর আসামি সাহিনুর রহমান ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষকদলের সভাপতি। দুজনই অভিযোগ করেন, টাকা না পেলে ওসি তাদের মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়েছিলেন।
মমিনুর ইসলাম মমিন বলেন, ‘টাকা না পেয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন।’
সাহিনুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই আমাদের আসামি করে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে তিনি একজনের মাধ্যমে টাকা দাবি করেছিলেন।’
আরও জানা যায়, উপজেলার বড়খাতা বাজারে ব্যবসা করেন-এমন দুই ভাইকেও ওই মামলায় জড়ানো হয়েছে। যারা রাজনীতিতে জড়িত নন। তাদের কাছে আরেক সাংবাদিক ২০২১ সালে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন। চাকরি হয়নি, সেই টাকাও এ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়নি।
দুই ভাইয়ের একজন রশিদুল বলেন, ‘এখন যাতে টাকা (ফেরত) দেওয়া না লাগে, সেজন্য রহিম সাংবাদিকের মামলায় আমাদের জড়ানো হয়েছে।’
অপর ভাই রাশেদুল বলেন, ‘ওই সাংবাদিক যে টাকা নিয়েছিল, তার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’
এদিকে শনিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফোনের কথোপকথনটি মামলার বাদী সাংবাদিক আব্দুর রহিমের বলে তার ঘনিষ্ঠরা নিশ্চিত করেছেন। রাতে নিজের ‘এমএ রহিম’ ফেসবুক পেজ থেকেও ওই সাংবাদিক ওই কল রেকর্ডের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এতে ওসি সম্পর্কে কিছু বলেননি বলে দাবি করেছেন।
এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে আবদুর রহিমকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলায় মুই (আমি) ৪৫টা নাম দিছুং (দিয়েছি) ঠিকই; কিন্তু এখন পর্যন্ত মুই শিওর না এই নামগুলা কীভাবে আসছে। জামিন করি নিয়া আয়, মুই চার্জশিট থাকি নাম কাটি দিম (দেব)।
একই রেকর্ডে হাতীবান্ধা থানার ওসি সম্পর্কে রহিমকে বলতে শোনা যায়, ‘ওসি টাকা ছাড়া দুনিয়াত আর কিছু দেখে না। বাপ-মাও দেখে না। টাকা হইলে ওর বাপের নামেও অভিযোগ দেয়...।’
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আমিনুর রহমান বলেন, ওসি ও বাদীর যোগসাজশে মামলা রেকর্ড করে আমাদের কৃষক দলের ইউনিয়ন সভাপতিসহ নিরীহ অনেক মানুষকে আসামি করা হয়েছে। সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমরা কাল (আজ) মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছি।
হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার বাদী ও ওসি টাকার জন্য মামলা বাণিজ্যে মেতেছেন।
এ বিষয়ে আবদুর রহিম যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, কল রেকর্ডটি এডিট করা।
আর হাতীবান্ধা থানার ওসি মো. মাহমুদুন নবী বলেন, ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডটি এডিট করা বলে বাদী আমাকে জানিয়েছেন। তবে মামলায় কৃষক দলের নেতা ও নিরীহ লোকদের নাম থাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।