Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে ইউনিয়নে ১ ইঞ্চিও পাকা রাস্তা নেই

Icon

প্রণয় ভৌমকি, রায়পুরা (নরসিংদী)

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম

যে ইউনিয়নে ১ ইঞ্চিও পাকা রাস্তা নেই

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জারচর ইউনিয়নে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ১ ইঞ্চি রাস্তাও পাকাকরণ হয়নি। এখনো ১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ভরসা মাটির রাস্তা ও বর্ষা মৌসুমে নৌকা। জন্মের পর থেকেই যোগাযোগ ক্ষেত্রে কষ্ট তাদের জীবনসঙ্গী। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়তই কমছে শিক্ষার হার। বৃদ্ধি পাচ্ছে গোষ্ঠীগত দাঙ্গা-হাঙ্গামা।

সরেজমিন জানা যায়, প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে অবস্থিত মির্জারচর ইউনিয়ন। এখানে ১২টি গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। নারী-পুরুষসহ ভোটার রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। এ ইউনিয়নের কোথাও এক ইঞ্চি পাকা সড়ক নেই। একটি ইটের সলিং চোখে পড়লেও সেগুলোর ইট উঠে গেছে অনেকাংশে। প্রয়োজনীয় সেতু-কালভার্ট নেই। ইউনিয়নের ১২ গ্রামে যাতায়াতের জন্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তার কোথাও পাকা নেই। ইউনিয়ন থেকে অন্য কোথাও যেতে হলে দীর্ঘপথ হেঁটে ও নৌকায় নদী পার হয়ে যেতে হয়।

ইউনিয়নের লোকজন বলেন, বৃষ্টি হলে কাদামাটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। জুতা পরে রাস্তায় চলা যায় না। সারা দেশে উন্নয়নের কথা শুনলেও আমরা চোখে দেখিনি। এখানকার মানুষগুলো কত কষ্টে আছে সেটা যারা আসেননি, তারা অনুভব করতে পারবেন না। নরকের মধ্যে বসবাস করছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল মির্জারচরের প্রতিটা বাড়ি থেকে যেন প্রতিটা ছেলে-মেয়ে হাইস্কুলে বা প্রাইমারি স্কুলে যেতে পারে। নৌকার জন্য স্কুলে যাইতে পারি নাই- এমন অজুহাত যেন দেখাতে না পারে।

মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আমরা অনেক দূর থেকে হেঁটে স্কুলে আসি। অনেক কষ্ট হয়। রাস্তা ভালো হলে আমাদের কষ্টটা কম হতো। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য অহিদ মেম্বার বলেন, আমাদের ইউনিয়নে এক ইঞ্চি পাকা রাস্তা নেই। উপজেলা সদরে যেতে আমাদের কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যেতে পারি না। এখানে রাস্তা করে দিলে অনেক উপকার হতো।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে মির্জারচরের মতো এমন অনুন্নত ইউনিয়ন আর কোথাও নেই। বিগত ১৭ বছরের মধ্যে এখানে এক ইঞ্চি রাস্তার উন্নয়ন হয়নি। নদীভাঙনের কথা নাইবা বললাম।

মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন বলেন, রায়পুরা উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ইউনিয়ন মির্জারচর। এখানে একটি মাত্র মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় সেটি হলো মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত পাওয়া যায় ৫শ। বাকিগুলো পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে চলে যায়। সেখানে ৮ কিলোমিটার দূরত্ব হলেও পাকা রাস্তা থাকায় তারা নদী পার হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে সহজে যেতে পারে। এই ইউনিয়নে সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি হলে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সার্বিক মান উন্নয়ন হবে। 

মির্জাচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসা. মাহফুজা আক্তার বলেন, এলাকায় এক ইঞ্চি রাস্তাও পাকা নেই। চলাচল উপযোগী রাস্তা নেই।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ইউপি নির্বাচনে আমার স্বামী জাফর ইকবাল মানিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলজিইডি কর্তৃক রাস্তার আইডি তৈরি করেছিল এবং কিছু রাস্তা পাকাকরণের প্রক্রিয়া নিয়েছিল। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় এমপি রাজু ভাই চরাঞ্চল থেকে ভোট কম পাওয়ায় উন্নয়নের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে মির্জারচরকে যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনার দাবি জানাই।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) রায়পুরা উপজেলা প্রকৌশলী মাজেদুল ইসলাম সজিব বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত। এই চরাঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত না, স্পেশালি মির্জারচর ইউনিয়নে এলজিইডি কর্তৃক একটিও পাকা রাস্তা করা হয়নি। এখানে আমাদের এলজিইডির গেজেটভুক্ত রাস্তা আছে প্রায় ১৬ কিলোমিটারের মতো। মূল প্রতিবন্ধকতাটা হচ্ছে এই ইউনিয়নটা নদীবেষ্টিত এবং এখানে ব্রিজ না থাকার কারণে এটার এক্সেসটা বা এক্সসের সুফলটা পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, রায়পুরার মেইন নদী পান্তশালা ঘাটে বড় একটা ব্রিজ আমাদের দরকার। সেটা হচ্ছে ১ হাজার ৪৭০ মিটার। আমি যতটুকু জানি চায়না অর্থায়নে হওয়ার কথা। এই ব্রিজটা যখন হবে তখন কিন্তু যুগান্তকারী একটি ঘটনা ঘটবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। একই সাথে মির্জারচরের জন্য বাঁশগাড়ি জিসি টু মির্জারচর ইউপি রাস্তাটা আছে সেখানে আমার প্রায় ৫০০ মিটার একটি ব্রিজ দরকার। এই ব্রিজটাও কিন্তু আমাদের ডিজাইন এবং প্রাক্কলন করা আছে এবং সঙ্গে আরও ৩টা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাঁশগাড়ি জিসি টু মির্জারচর জিসি, বাঁশগাড়ি জিসি টু চরমধুয়া জিসি, পাড়াতলী ইউনিয়নের বকটরিয়াকান্দি থেকে কালিকাপুর এবং চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের মাছিমপুর ফেরিঘাট। এই ৪টি ব্রিজই আমাদের ডিপিবি অন্তর্ভুক্ত করা আছে এবং একনেকে ওঠার অপেক্ষায় আছে। আমি আশা করি বর্তমান সরকারের আমলেই এই ৪টি ব্রিজসহ ১ হাজার ৪৭০ মিটার ব্রিজ একনেকে অনুমোদিত হবে। এই ব্রিজগুলো হয়ে গেলে মির্জারচরের মূল জনপদ রায়পুরা-বাঁশগাড়ি তথা রায়পুরা মূল জনপদে সংযুক্ত হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছি এখানে সেরকম কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়নি। আমরা চেষ্টা করব পরবর্তীতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি আসছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন মির্জারচরে দেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক একটা উন্নয়ন কর্মসূচি যেন নেওয়া যায় সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখব। স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম