Logo
Logo
×

সারাদেশ

সরকারি জমি দখল করে কিন্ডারগার্টেন স্কুল

Icon

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১১ পিএম

সরকারি জমি দখল করে কিন্ডারগার্টেন স্কুল

দীর্ঘ ১৩ বছর সরকারি স্কুলের তিনটি কক্ষে চলে কিন্ডারগার্টেনের কার্যক্রম। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় পরে কক্ষ থেকে সরিয়ে স্কুলের জায়গা দখল করে তৈরি করা হয় স্থাপনা। সবশেষ ১৮ বছর ধরে সেই স্থাপনায় চলছে ওই কিন্ডারগার্টেনের কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও অজানা কারণে বন্ধ হচ্ছে না সেই কিন্ডারগার্টেন। বরং ওই কিন্ডারগার্টেন সরকারি করতে চালানো হচ্ছে প্রচেষ্টা। ঘটনাটি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের সরকারি মাচ্চেন্টস একাডেমির জায়গা দখল করে চলা কিন্ডারগার্টেনের।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে কিন্ডারগার্টেন চালানোর কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু সে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালানো হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন। বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন ওই কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির সম্মতিতে কিন্ডারগার্টেনটি চালানো হয় বলে জানান ওই শিক্ষক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর পৌর শহরের উপজেলা পরিষদ সড়কে সরকারি মাচ্চেন্টস একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ২৬ জানুয়ারি। এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮০ সালে। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়। দুই একর ১৫ শতাংশ জমি জাতীয়করণ হওয়ার সময় মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দেন।। তখন থেকে সেই জমি সরকারি হাই স্কুলের নামে অর্ন্তভুক্ত।

প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়তি আয় করতে সাবেক প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় ১৯৯৪ সালে উচ্চ বিদ্যালেয়ের চারটি কক্ষ দখল করে ‘মার্চেন্টস একাডেমি কিন্ডারগার্টেন’ নামে স্কুল চালু করা হয়। আর ২০০৭ সালে ১২ শতাংশ জমি দখল করে সেমিপাকা ভবন করে ‘মার্চ্চন্টস প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে পরিচালনা করা হচ্ছে ওই কিন্ডারগার্টেন।

গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পরে সমন্বয়কসহ স্থানীয়রা মাচ্চেন্টস একাডেমি থেকে কিন্ডারগার্টেনটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানান। তবে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সে কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মিথ্যে তথ্য দিয়ে কিন্ডারগার্টেনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামকরণ করে সরকারি করানোর চেষ্টা করছেন এর প্রধান শিক্ষক।

সরকারি মাচ্চেন্টস একাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তফা ফারুকি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে দলটির কয়েকজন নেতার প্রভাব কাটিয়ে ১৩ বছর সরকারি হাই স্কুলের চারটি কক্ষ ব্যবহার করে কিন্ডারগার্টেন পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় কক্ষের প্রয়োজন হওয়ায় তারা এখান থেকে বের হয়ে হাইস্কুলেরই ১২ শতাংশ জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে। কোনো নিয়ম না মেনেই কিন্ডারগার্টেনটি পরিচালনা করছে প্রধান শিক্ষক নুরে আলম। মিথ্যে তথ্য দিয়ে সরকারি করণেরও চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পরে সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস থেকে কিন্ডারগার্টেনটি সরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেছিল ইউএনওর কাছে। কিন্ডারগার্টেনটি সরিয়ে নিতে লিখিত ও মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম তা মানছে না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরে আলম বলেন, ‘তথ্য নিতে হলে লিখিত আবেদন করতে হবে। না হলে স্কুলের কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাচ্চেন্টস একাডেমি সরকারি হওয়ার আগে থেকেই স্কুলে সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মামুনুর রশীদের অনুমতি নিয়ে স্কুলের তিনটি কক্ষ ব্যবহার করেছি। গত ১৬ বছর একাডেমির উত্তর পাশে কিন্ডারগার্টেনটি পরিচালনা করছি।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে কিন্ডারগার্টেন চালানোর নিয়ম নেই। ওই কিন্ডারগার্টেনের জন্য আমাদের থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি।’ সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে কিন্ডারগার্টেন পরিচালনা যায় না। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউএনও। এ বিষয়ে ইউএনও ও হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান খান বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম