
প্রিন্ট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০১:১৯ পিএম
চলছে সুশীলের ‘ডাক্তার বানানোর কারখানা’

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১১:০৭ পিএম

আরও পড়ুন
সমাজসেবার নিবন্ধনের আড়ালে চলছে সুশীল দাসের ভুয়া সার্টিফিকেটধারি ‘ডাক্তার’ বানানোর কারখানা। নেই সংশ্লিষ্ট হোমিপ্যাথি বোর্ডের অনুমতি কিংবা রেজিস্ট্রেশন। এরপরও প্রশাসনের চেখে ধুলো দিয়ে ‘আপো হোমিও বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে প্রধান ক্যাম্পাস খুলে দেশেব্যাপী শাখা খোলার অনুমতি দিয়ে চলছে বছরে কোটি টাকার বাণিজ্য। নেপথ্যে রয়েছে বৈদেশিক দাতা সংস্থার মোটা অংকের আর্থিক সহায়তা পাওয়া ধান্দা। স্থানীয় প্রশাসনের পরিদর্শনে হোমিও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বৈধ কাগজপত্র না মিললেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়নি সুশীল দাসের ‘ডাক্তার বানানোর’ আস্তানা।
সুশীল উপজেলার মাঝিয়ালী গ্রামের সুনীল দাসের ছেলে। বেসরকারি পর্যায় হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালা উপেক্ষা করে সুশীল দাসের কথিত এই হোমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে দেশব্যাপী খোলা ৬০টি শাখা এই প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়।
জানা যায়, ২০২০ সালে নিরামপুর পৌরশহরের পশু হাসপাতাল রোডে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হয় সুশীল দাসের ‘ডাক্তার বানানোর কারখানা’। পরে মনিরামপুর সরকারি কলেজের সামনে একটা ভবন ভাড়া নিয়ে এই আস্তানা গেড়েছেন তিনি।
সুশীল দাস মূলত ২০০৭ সালের ১ জুলাই আপো (আন্ডার প্রিভিলেজ পিপুলস অর্গানাইজেশন) নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্থাপন করেন। সংস্থার গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্যসমূহের ১৪ নম্বর ধারাকে হাতিয়ার বানিয়ে এই হোমিও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। যার মূল উদ্দেশ্য বৈদেশিক সংস্থা থেকে মোটা অংকের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার ধান্দা। কারণ বেসরকারি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা নীতিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, এই পর্যায় থেকে কোনো বেসরকারি হোমিওপ্যাথি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক দাতা সংস্থা হতে আর্থিক সহায়তা নিতে পারবে। এদিকে সবার চোখে ধুলো দিয়ে এই হোমিও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে সারা দেশে দেওয়া হয়েছে আরও ৬০টি প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি।
প্রধান শাখাটি মনিরামপুরের সরকারি কলেজের সামনে অবস্থিত। এই প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে খোলা একটি হোমিও কলেজের চটকদার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ে। বিজ্ঞাপনে দেওয়া একটি মোবাইল ফোনে কথা বললে অপর প্রাপ্ত রিসিভ করা ভদ্রলোকটি নিজেকে ডা. সায়ফুল ইসলাম নামে পরিচয় দেন।
তিনি ওই হোমিওপ্যাথিক কলেজের প্রিন্সিপালে দায়িত্বে রয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, যশোরের মনিরামপুরের প্রধান কার্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব হেমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি ডিগ্রি নিয়েছেন। অনলাইনে ক্লাস করে তারমতো রংপুর জেলার নুরুল ইসলাম, এনামুল হক, সালাউদ্দীন, নাচোলের লুৎফর রহমানও ডিগ্রি নিয়েছেন। ওই কলেজে ১৮ জন শিক্ষার্থী সাড়ে পাঁচ বছর ও তিন বছর মেয়াদি হোমিও কোর্সে ৪৪০০ টাকায় ভর্তি ও মাসে এক হাজার টাকা বেতন দেন।
এ ব্যাপারে সুশীল দাস বলেন, ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেই এই কার্যক্রম চলছে। দেশেব্যাপী খোলা শাখায় ১৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনো তার আপো হোমিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট পাননি।
কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের সায়ফুল ইসলামসহ কয়েকজন কিভাবে সার্টিফিকেট অর্জনসহ একটি হোমিও কলেজের প্রিন্সিপাল হলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হয়তো ডিপ্লোমা কোর্স করতে পারেন। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো বৈদেশিক সাহায্য পাননি। তবে, আবেদন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপো (আন্ডার প্রিভিলেজ পিপুলস অর্গানাইজেশন) নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুমতি পান। এই সংস্থার ৭ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক মণ্ডলীর সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস।
এ সংস্থার সহসম্পাদক অশোক কুমার দাস বলেন, তিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর। সুশীল দাসের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে তিনি সময় পেলে মাঝেমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানে যান। তিনি যে কমিটিতে আছেন তাও জানেন না।
সরোজ রায় নামে একজন বলেন, তাকে শিক্ষক হিসেবে নাম দেয়; কিন্তু পরে দেখেন সবই ভুয়া। আর ওই পথ মাড়াননি তিনি।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ্যাসিল্যান্ড নিয়াজ মাখদুম ওই আপো হোমিও বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তিনি জানান, এই হোমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন সুশীল দাস। এর আগে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার রোকনুজ্জামান ২০২৩ সালে পরিদর্শনে গিয়ে ভুয়া কাগজপত্র পান। তিনি এ সংক্রান্ত চিঠি দিলেও বন্ধ না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, সরেজমিন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। অচিরেই এটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে।
যশোর জেলা সিভিল ডা. সার্জন মাসুদ রানা বলেন, আগেই এটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখনো চলছে এটি চলছে তার জানা নেই।