Logo
Logo
×

সারাদেশ

মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতেই মাটির গহনা তৈরি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম

মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতেই মাটির গহনা তৈরি

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বসে নেই আমতলীর কলেজপড়ুয়া আয়শা আঁখি। বিলুপ্ত মৃৎশিল্প ও মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে আয়শা আক্তার আঁখি মাটির গহনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। গত চার বছরের নিরলস পরিশ্রমে এখন পর্যন্ত ৫০০-এর বেশি গহনা তৈরি করেছেন। বিক্রি করেছেন তিন শতাধিক। অনলাইনে বিক্রিতে বেশ সাড়া পেয়েছেন। মাটির গহনা বিক্রিই সংসারের আর্থিক জোগানের মূল চালিকা শক্তি। আর্থিকভাবে সরকারি সহায়তা পেলে কাজের পরিধি আরও বেড়ে যেত বলে দাবি করেন আঁখি।

জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামের আলমগীর গাজীর মেয়ে আয়শা আক্তার আঁখি। আঁখির মা মরিয়ম বেগম ছোটবেলায় একজোড়া মাটির কানের দুল ক্রয় করেন। ওই কানের দুল জোড়া তিনি আলমিরায় রেখে দিয়েছেন। বিলুপ্ত মাটির জিনিস ধরে রাখা ও মায়ের গহনা দেখেই মেয়ে আয়শা উদ্যোগ নেন মাটির গহনা তৈরির। নিজের অদম্য চেষ্টায় গহনা তৈরির পদ্ধতি শিখে নেন। আঁখি ২০২১ সালে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তার বিয়ে হয়ে যায়। আয়শা বর্তমানে আমতলী সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে লেখাপড়া করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্বামী গাজী মো. সোলায়মানের সংসারে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজতে তিনি মাটির গহনা তৈরির শুরু করেন।

গহনা তৈরিতে ব্যবহার করছেন মাটি, কাঁচামাল ও রং। মাটির ওপর বাহারি ডিজাইনের নিখুঁত নকশা করে সুনিপুণভাবে তিনি গহনা তৈরি করছেন। এ পর্যন্ত ৫০০-এর বেশি গহনা তৈরি করেছেন। গহনার মধ্যে রয়েছে- নিখুঁতভাবে তৈরি কানের দুল, গলার সেট, মালা, হাতের চুড়িসহ নানাবিধ জিনিস। নানা আলপনার মাধ্যমে তিনি মাটির গহনা তৈরি করছেন। তৈরিকৃত গহনা তিনি অনলাইনে বিক্রি করছেন। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও বর্তমানে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। এখন ক্রেতারা অনলাইনে কারুকাজ দেখে নতুন তৈরির অর্ডার করছেন আবার কেউ তাদের পছন্দের গহনা ক্রয় করছেন। টেকসই এ গহনা দামে তেমন বেশি নয়। প্রকারভেদে প্রতি সেট গহনা ৭০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে তিনি স্বামী গাজী সোলায়মানের বাড়িতে উত্তর টিয়াখালীতে বসে অনলাইনে বিক্রি করছেন। এসব বিক্রির আয় থেকে তিনি সংসারের খরচ মিটিয়ে থাকেন। তবে আর্থিক সহায়তা পেলে তার কাজের পরিধি আরও বৃদ্ধি পেত বলে জানান আঁখি।

ক্রেতা তানজিলা বলেন, বর্তমানে সোনার মূল্য অনেক বেশি, যা সাধ্যের বাইরে। অনলাইনে আয়শা আঁখির কাছ থেকে বাহারি কারুকাজের এক সেট মাটির গহনা ক্রয় করেছি। এ গহনা পরিধান করতে বেশ ভালোই লাগে।

স্বামী সোলায়মান বলেন, স্ত্রীর এমন ভালো কাজে আমি সহযোগিতা করে আসছি। মাটির গহনা বিক্রির অর্থ দিয়ে তিনি সংসারে বেশ জোগান দিচ্ছেন।

মা মরিয়ম বেগম বলেন, ছোটবেলায় বাজার থেকে একটি মাটির গহনা কিনে এনেছিলাম। গহনা সেট গত ২৫ বছরে ধরে আলমিরায় রাখা ছিল। বছর পাঁচেক আগে হারিয়ে ফেলেছি। ওই গহনা দেখে আমার মেয়ে আয়শা আঁখি মাটির গহনা তৈরির উদ্যোগ নেয়। অনেক কষ্ট করে শিখে ফেলেছে। এখন স্বামীর বাড়িতে বসে তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছে।

আয়শা আঁখি বলেন, বিলুপ্ত মাটির জিনিস ধরে রাখতে এবং মায়ের ব্যবহৃত মাটির গহনা দেখেই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। নিজের চেষ্টায় গহনা তৈরির পদ্ধতি রপ্ত করেছি। বিভিন্ন কারুকাজ দিয়ে এ পর্যন্ত ৫০০-এর বেশি গহনা তৈরি করেছি। তিন শতাধিক বিক্রি করেছি। অনলাইনে মানুষ বেশ ক্রয় করছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পেলে আমার কাজের পরিধি আরও বৃদ্ধি করা যেত; কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে তেমন তৈরি করতে পারছি না।

আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, বিলুপ্ত মাটির জিনিস ধরে রাখতে আঁখি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত চমৎকার। আবেদন পেয়ে তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম