ছেলেকে বিদায় জানাতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা

ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

রাজধানীর শাহজাদপুরে মজুমদার ভিলা নামের একটি বহুতল ভবনের দোতলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান শহীদুল ইসলাম মিরন জমাদ্দার (৬০)। তিনি তার ছেলে মুনিম জমাদ্দারকে (২৫) সৌদি আরব পাঠাতে ফ্লাইটে তুলে দিতে রোববার ঢাকায় গিয়েছিলেন।
তার সঙ্গে ছিলেন মুনিমের মামা হিরন তালুকদার। তারা তিনজন ওই ভবনের ষষ্ঠতলায় সৌদিয়া নামে একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। মুনিম তার মামা হিরনকে নিয়ে সকালে নাস্তা আনতে যাওয়ার পর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ সময় শহীদুল ইসলাম মিরন জমাদ্দারসহ হোটেলে অবস্থানরত চারজন মারা যান।
নিহত বৃদ্ধ শহীদুল ইসলাম মিরনের আজ তার ছেলেকে সৌদি পাঠাতে বিমানে তুলে দেওয়ার কথা; কিন্তু তিনি আজ মঙ্গলবার সকালে লাশ হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। নিহত শহীদুল ইসলাম মিরন জমাদ্দারের লাশ পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দারুলহুদা গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
নিহত শহীদুল ইসলামের শ্যালক হিরন তালুকদার জানান, মঙ্গলবার সকালে ভাগিনা মুনিম তালুকদারকে বিমানে তুলে দিতে তারা তিনজন মিলে গত রোববার ঢাকায় যান। তারা তিনজন ওই ভবনের ষষ্ঠতলায় সৌদিয়া নামে একটি হোটেলে ওঠেন। মুনিম ও তার মামা হিরন সোমবার সকালে হোটেল থেকে বেরিয়ে সকালের নাস্তা আনতে যাওয়ার পর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা হোটেলে অবস্থানরত মিরন জমাদ্দারকে ফোন দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলেন; কিন্তু অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে ওই ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে আর তিনি বের হতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করেন। এ সময় আরও তিনজনের লাশও উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, ধোঁয়ার তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে তারা ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ওই সময় ছাদের দরজা তালাবদ্ধ ছিল। এ কারণে তার মৃত্যু ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত বৃদ্ধ মিরন জমাদ্দারের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয় সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, ছেলেকে বিমানে তুলে দিতে গিয়ে লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসা খুবই মর্মান্তিক। নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী গত তিন বছর বছর আগে মারা যান। একমাত্র ছেলের কর্মসংস্থানের জন্য বহু কষ্টে তাকে সৌদি আরব পাঠাতে বিমানে তুলে দিতে তিনি গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারটি এখন অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
এ ব্যাপারে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, পরিবারটির এমন অসহায় অবস্থা দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে খোঁজ নিয়ে সহযোগিতা করা হবে।