ইউএনওর বিরুদ্ধে চালকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলাম পরিবহণের বাসচালক ঘুলু মিয়া তার গায়ে হাত তোলার অভিযোগ এনেছেন। পরে ইউএনওর বিচার দাবিতে উপজেলা পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে রাস্তার মাঝখানে ট্রাক ও বাস রেখে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
উপজেলা সোনালী ব্যাংকের সামনে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পরিবহণ শ্রমিক ও ভুক্তভোগী চালক সূত্রে জানা যায়, যানজট নিরসনে পৌরসভার পাড়াটঙ্গিতে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যে উপজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়; কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন নিজেদের দখলে রাখেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে মুক্তাগাছা শহরের প্রাণকেন্দ্র ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সোনালী ব্যাংকের সামনে ইসলাম পরিবহণসহ একাধিক বাসের যাত্রী ওঠানামা করেন। এতে পৌর শহরের মানুষ তীব্র যানজটের সম্মুখীন হন।
স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসনে রোববার সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ইসলাম পরিবহণের একটি বাস দাঁড়িয়ে থাকায় আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেই সঙ্গে ইসলাম পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত বাস টার্মিনালে বাসের যাত্রী ওঠা-নামার এবং রাস্তায় একটির বেশি গাড়ি না থামানোর নির্দেশ দেন ইউএনও আতিকুল ইসলাম। এতে পরিবহণ শ্রমিক ও বাসচালকরা ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হন।
মঙ্গলবার সকালে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সোনালী ব্যাংকের সামনে ইসলাম পরিবহণের একাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয়রা ইউএনওকে খবর দেন।
স্থানীয় একাধিক দোকানি, এলাকাবাসী ও বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে তবুও কিছু নেতাদের কারণে সোনালী ব্যাংকের সামনেই ইসলাম পরিবহণ বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাই। বারবার চেষ্টা করে ইসলাম পরিবহণকে নতুন বাস টার্মিনালে হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের মতে নতুন বাস টার্মিনালে সকল পরিবহণ যাত্রী ওঠা-নামা করালে যানজট অনেকাংশেই কমে আসবে।
ইউএনওর ভাষ্যমতে, তিনি সেখানে ইসলাম পরিবহণের চালককে বকাঝকা দিয়ে সরিয়ে দেন। এতে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে চালকেরা মারধরের নাটক সাজায়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সাজানো নাটক।
ইউএনও আতিকুল ইসলাম আরও জানান, সেখানে অনেকেই ছিলেন ভিডিও করছিলেন, কেউ বলতে পারবেন না আমি চালকের গায়ে হাত তুলেছি। তবে এটা নিশ্চিত বলতে পারি, সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে নির্ধারিত বাস টার্মিনালের বাহিরে বাস দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। কারণ একটাই জনসাধারণের অভিযোগ ইসলাম পরিবহণের কারণেই মূলত মুক্তাগাছায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী চালক ঘুলু মিয়া দাবি করেছেন, বাসের ভিতরে ঢুকে ইউএনও তার ড্রাইভারকে লাঠি দিতে বলে এবং সেই লাঠি দিয়ে তিনি আমার হাত ভেঙে দেন। রোজা আছি বললেও তিনি ছাড় দেননি। আমি তার বিচার ও অপসরণ চাই।
এ বিষয়ে ইউএনওর ড্রাইভার সোহাগ জানান, আমার কাছে লাঠি ছিলও না। আর ইউএনও (স্যারও) কোনো ধরনের লাঠি চাননি। সেখানে মারামারির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা পরিবহণ মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের নীতি-নির্ধারকদের একজন শহীদুল ইসলাম শহীদ জানান, উভয়ের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।