জানা গেল খালেদা জিয়ার আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী কে?

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১১:১০ এএম

ফাইল ছবি
বগুড়া-৬ (সদর) আসনটিকে ভিআইপি আসন বলা হয়ে থাকে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে থাকেন। মূলত এ আসনটি জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। যদিও অধিকাংশ সময় নির্বাচিত হয়ে সংসদে তিনি এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। এখানে প্রতিবার উপনির্বাচন হয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। বিএনপি নেতাকর্মীরা চান-এ আসনে এবারও খালেদা জিয়া প্রার্থী হন। তাই দলীয় কোনো নেতা প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না।
তবে কোনো কারণে খালেদা জিয়া প্রার্থী না হলে চারজন বিএনপির টিকিট চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল।
তবে একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অনেক নেতা আত্মগোপনে থাকায় তারা মাঠে নেই। অন্যসব রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সক্রিয় নন।
সূত্র জানায়, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও এ আসনে উপনির্বাচনসহ ১৬ বার নির্বাচন হয়েছে। এ আসন থেকে খালেদা জিয়ার তিনবারসহ বিএনপি প্রার্থী ১০ বার নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী তিনবার, জাতীয় পার্টি একবার, জামায়াতে ইসলামী একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এসএম সিরাজুল ইসলাম সুরজ এবং ১৯৭৯ সালে বিএনপির ওয়াজেদ হোসেন তরফদার নির্বাচিত হন। সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর আবদুর রহমান ফকির নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুর রহমান ভান্ডারী নির্বাচিত হন। এরপর আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে মজিবর রহমান, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ও উপনির্বাচনে অ্যাডভোকেট জহুরুল ইসলাম, ২০০১ ও ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হলেও শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু পুনরায় নির্বাচিত হন।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রার্থী হবেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করেন। তিনি প্রার্থী না হলে চারজন দলীয় প্রার্থী হতে চাইছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী জলসা, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ফুটবল ম্যাচসহ বিভিন্ন খেলায় তারা অতিথি থাকছেন। এলাকার দুস্থদের সাধ্যমতো সাহায্য ও সহযোগিতা করছেন। প্রকাশ্য ও ইঙ্গিতে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারা ভোট ও দোয়া চাইছেন। প্রার্থীদের স্বজনরাও মাঠে নেমে পড়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের হাইকমান্ডের দিকে চেয়ে আছেন। এ আসনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
রাজনৈতিক হত্যা ও নাশকতার অসংখ্য মামলায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকাছাড়া। ৫ আগস্টের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম ওমরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতার মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। আবার অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বিএনপি ও তাদের সাবেক শরিক জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। ভোটাররা বলছেন, সদর আসনে আওয়ামী লীগ বা তার শরিক দলগুলোর ভোট কোনো ফ্যাক্টর নয়।
এ আসনে কোনো কারণে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে না পারলে দলীয় কয়েকজন নেতা প্রার্থী হতে চাইতে পারেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা। জামায়াতের একক প্রার্থী বগুড়া শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। তবে এখন পর্যন্ত অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নাম শোনা যায়নি।
অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৪ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাত বছর পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছি। বগুড়া পৌরসভার তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। পৌরসভার বর্ধিতকরণসহ নানা উন্নয়ন করেছি। তিনি আশা করেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
রেজাউল করিম বাদশা বলেন, তিনি চান খালেদা জিয়া এ আসনে নির্বাচন করুক। বিকল্প চিন্তা করার মতো সময় এখনো আসেনি।
বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ স ম আবদুল মালেক জানান, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান সোহেলকে জামায়াতের প্রার্থী করা হয়েছে। আবিদুর রহমান সোহেল জানান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে বগুড়াবাসীর সঙ্গে প্রথম কাতারে ছিলেন। তিনি আশা করেন-সদর আসনের ভোটাররা সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন।