পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি প্রতারক সুমনের

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি মিথ্যা পরিচয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। দীর্ঘ ১২ বছর পর তদন্তে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়েছে।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ার আগে থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
শুক্রবার বিকালে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরলে স্থলবন্দর এলাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
গত শনিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে ওই পুলিশ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আটকের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মো. মোজাফফর হোসেন।
তিনি জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রম করলে বন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার আসার সংবাদ পেয়ে স্থলবন্দর এলাকায় সদর থানা পুলিশ অবস্থান নেন। সেখান থেকে গ্রেফতারের পর শনিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রতারণার অভিযোগ ওঠা ওই পুলিশ সদস্যের নাম মো. সুমন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া গ্রামে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার মোগড়া গ্রামের বাসিন্দা নান্নু মিয়ার ছেলে সুমন। ২০১২ সালে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পরীক্ষায় অংশ নেন এবং মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় চাকরির জন্য প্রতিবেশী মো. হোসেন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করেন। প্রকৃতপক্ষে, হোসেন মিয়া তার দাদা নয়। এ প্রতারণার বিষয়ে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর স্থানীয় যুবক মো. ফরহাদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগের পর তৎকালীন কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেনকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়- অভিযুক্ত মো. সুমন ২০১২ সালের ৩ জুলাই ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পরীক্ষার সময় তার প্রতিবেশী হোসেন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। পরবর্তী বিধি মোতাবেক পুলিশ ভেরিফিকেশনের (ভিআর) পর ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ থেকে কনস্টেবল পদে চাকরি করে আসছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে মো. সুমনের দাখিলকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হোসেন মিয়া (অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য) তার দাদা নয়। অভিযুক্ত মো. সুমনের দাদার নাম আলতাফ আলী হোসেন। সে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হোসেন মিয়ার নাতি না হয়েও ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়ে যাবতীয় বেতন ও রেশনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
এদিকে সর্বশেষ কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় কর্মরত থাকা কনস্টেবল মো. সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলাকালেই গত বছরের ১ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে তিনি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এরপর ২১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।