সন্ত্রাসীদের দাপটে অতিষ্ঠ চরাঞ্চলবাসী

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ পিএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গর্ত থেকে বেরিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলের সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসী আতঙ্ক ছড়াতে এলাকায় মাঝে মধ্যে গুলিবর্ষণ, বোমা হামলা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, গরু-মহিষ ও ফসল লুটসহ খুনের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। ফলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে চরের মানুষেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা
চরাঞ্চলের সন্ত্রাসীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে মাঝে মধ্যে
নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এ সকল সন্ত্রাসীরা চরাঞ্চলে প্রাকাশ্যে অস্ত্রের
মহড়া দিচ্ছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরের মাসেই অর্থাৎ
৩০ সেপ্টেম্বরে দিবালোকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে। একই বছরের ২ নভেম্বর রাতে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে
মারধর করে পাঁচ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে
ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে শিতলাইপাড়া এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন এক নারী।
মোটরসাইকেলযোগে আসা ছিনতাইকারীরা ওই নারীর টাকা ছিনতাই করে।
১৪ জানুয়ারি বিকালে হরিণগাছী এলাকায় নগদের মার্কেটিং অফিসারকে কুপিয়ে জখম করে এক লাখ ৫৭ হাজার টাকা ছিানয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে উপজেলার আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের তেকালা এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে একটি নির্মাণাধীন সেতুর শ্রমিকদের অস্থায়ী ঘর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে মাদক চোরাচালানকে কেন্দ্র করে দুই চোরাকারবারী
গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এক মাদক বহনকারীর গুলিবিদ্ধ হন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৃষক দম্পতিকে বেঁধে রেখে গরু ও ছাগল লুট করা হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি
দিবাগত রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম প্রামানিকের ছেলে
রাজু হোসেন (১৮) নামে এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পদ্মার চরে গুলি করে হত্যা করা
হয়। পরদিন সকালে একই এলাকার সাঈদ মন্ডলের চরের বাথান থেকে অন্তত ৪৬ টি মহিষ ও ১৫টি
গরু লুট হয়। একইদিন রাতে ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকায় কালু কবিরাজের বাথান
থেকে ৩৪টি গরু লুট করা হয়।
কালু কবিরাজের গরু লুটের টাকার ভাগ নিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দিবালোকে
সন্ত্রাসীরা বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। ফিলিপনগর ইউনিয়নের চরসাদীপুর বাজারের পাশে পাঁচশবিঘা
মাঠে নিজেরা গোলাগুলি করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর উপজেলায় চুরি, ছিনতাই,
ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে এসব কাজ করছে সন্ত্রাসীরা।
পুলিশও কোনো কাজ আসছে না।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা বলেন,
‘শুধু চরাঞ্চল নয় সারা দৌলতপুর সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দখলে। কিছু নেতারা ছোট ছোট
ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, লুটপাট, ভাঙচুর করে জনমনে
আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এমনকি মাঠের ফসল পর্যন্ত কেটে নিয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজা আহমেদ বাচ্চু
মোল্লা বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা কোন দলের হয় না। চরাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে যারা
তাদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। এর জন্য যা করার তাই করব। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে এসব সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর দৌলতপুর থানায় খুনের
ঘটনায় চারটি ও ছিনতাইয়ে ঘটনায় ৩টি মামলা করেছে। এসব মামলায় বেশকিছু আসামি আটক হয়েছে।
আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের ধরার
জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’