বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত
মায়ের কাছে ছেলের শেষ আবদার, ‘মহরমের দুইটা রোজা থাইকো’

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০১ পিএম
-67c1cfe53ecb4.jpg)
ছবি: যুগান্তর
সাদিকুর রহমান সাদিক। ২১ বছর বয়সি এক যুবক। আবদুল্লাপুর উত্তরা জামি’আ দ্বীনিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার ৩য় বর্ষের ছাত্র। হাদিসী পাশ করে কিতাব খানায় পড়ছিলেন তিনি। জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় সৈনিক। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সহপাঠী অন্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।
দিনটি ছিল ১৯ জুলাই, শুক্রবার। মহরমের রোজা রেখে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেমে পড়েন রাজপথে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় মার সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। মাকে বলেছিলেন, মহরমের দুইটা রোজা রাখতে। অশ্রুসজল কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আর কাঁদছিলেন তার মা শাহনাজ বেগম।
হাফেজ সাদিকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে। সাগরদীঘি ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে। সখিপুর থানা সীমানা ঘেঁষে নিভৃত পাহাড়ি পল্লী ফুলমালির চালা করিমগঞ্জ ঘোনাপাড়া গ্রামে। তার বাবা কুয়েত প্রবাসী লুৎফর রহমান। মায়ের নাম শাহনাজ বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাদিক দ্বিতীয়। সাদিকের বড় ভাই শামীম সিঙ্গাপুর প্রবাসী। ছোট ভাই শাহেদ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জুলাই আন্দোলনে কীভাবে নিহত হয়েছিলেন? সরেজমিনে শুক্রবার সকালে সাদিকের বাড়িতে গিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘটনা সম্পর্কে তার মা শাহনাজের কাছে জানতে চাইলে যুগান্তরের কাছে মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন তিনি। বলেন, সাদিক সেদিন জুমার নামাজ শেষ করে সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে রাজপথে মিছিলে যোগ দেয়। আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে। গুলি লাগার ভিডিওটা সেখান থেকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। ভিডিওতে দেখা গেছে গুলি পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। গুলি লাগার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে মারা যায় সে।
সাদিকের স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে মাওলানা হওয়ার। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে তার স্বপ্নভঙ্গ হয় বুলেটে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে। সাদিকের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারেন এলাকাবাসীও।
চাচা মাসুদ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, গত বছর ১৯ জুলাই শুক্রবার ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারণ করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে তা সাদিকের পিঠ ভেদ করে নাভির পাশ দিয়ে বের হয়। সেদিন অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন ২০ জুলাই উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটা গুলিবিদ্ধ লাশের আত্মীয় স্বজন না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। লাশের শরীরে ইসলামী পোশাক ও চেহারা দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশেপাশের মাদ্রাসাগুলোতে খবর দেয়। খবর পেয়ে আব্দুল্লাহপুর উত্তরা জামিআ দ্বীনিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসা সুপার এসে সাদিকের লাশ শনাক্ত করেন বলে জানান।
খবর পেয়ে সাদিকের চাচা মোশারফ, মৃণাল ও রাশেদ উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল থেকে লাশ ঘাটাইল ফুলমালিরচালা ঘোনা পাড়া গোরস্থান এনে দাফনের ব্যবস্থা করেন।
এ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পেয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে সাদিকের মা শাহনাজ বেগম যুগান্তরকে বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি।