কুয়েটে হল ছাড়ল শিক্ষার্থীরা, পানি-ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্নের অভিযোগ

খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে হল ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে হল ত্যাগের সময়সীমা পার হওয়ার পরও ৭টি আবাসিক হলে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এসএম রশিদ হলের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কৌশল হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলগুলোর ইন্টারনেট সংযোগ ও পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কুয়েট ১৯ নামে ফেসবুক পেজেও এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবে বিকালের দিকে পানি সরবরাহ করা হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার সিন্ডিকেটে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ত্যাগের ঘোষণার পর থেকে বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ভিসিকে বর্জন করেছি। আর যেহেতু আমরা ভিসিকে বর্জনের ঘোষণা করেছি সেহেতু উনার আন্ডারে সিন্ডিকেটের যে সিদ্ধান্ত আসবে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিচ্ছি না। উনি আমাদের তিন ঘণ্টা যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। যেটা আপনারা দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাসভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ সাংবাদিকদের বলেন, হল ভ্যাকান্ট ঘোষণার পরও যারা রয়ে গেছেন আমাদের প্রোভোস্ট, আমার সব শিক্ষকরা চেষ্টা করছে, ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, ওদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বল প্রয়োগ করে নয়, বুঝিয়ে যাতে ওদেরকে হল থেকে বের করা যায়।
এর আগে হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তারা পাল্টা কুয়েট ভিসিকে সকাল ১০টার মধ্যে বাসভবন ত্যাগ করার অনুরোধ জানান।
মঙ্গলবার রাতে মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় হল ভ্যাকান্ট করে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ বিলোপের ৬ মাস পরও কুয়েট প্রশাসন সেই আগের পথে হাঁটছে। আমরা কোনোভাবে হল ত্যাগ করব না। হল ছাড়তে হলে পুলিশ আর্মি দিয়ে আমাদের রক্তের উপর দিয়ে হল ছাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে কি না এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রদল সমর্থিতরা বহিরাগতদের নিয়ে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় কুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর পরের দিন বুধবার কুয়েটের একাডেমিক ভবনে তালাসহ ৬ দফা দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিনই কুয়েটের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ৫টি দাবি মেনে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাভার বহন, তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানসহ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েটের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের পরিবর্তন চান। এই দাবিতে বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করার পর ধীরে ধীরে হল ছাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া ওই দিনই দুই বাসে ৮০ জন শিক্ষার্থী রোববার ঢাকার শহিদ মিনারে অবস্থান নেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় কুয়েট প্রশাসন অজ্ঞাতনামা আসামি করে খানজাহান আলী থানায় ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করে। মামলায় পাঁচজন আটক আছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রদল ও যুবদলের বহিরাগতরা হামলা করলেও তাদের নাম মামলায় দেওয়া হয়নি।