সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
প্রতিবেশী পুলিশ কর্মকর্তার অত্যাচারে ঘরছাড়া দুই পরিবার

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম

চট্টগ্রামে প্রতিবেশী পুলিশ কর্মকর্তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাছাড়া হয়েছেন চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই পরিবার। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এ অভিযোগ করে।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান বলেন, কোনো ব্যক্তি কখনো কোনো ধরনের বিপদে পড়লে প্রতিকারের আশায় পুলিশের কাছে ছুটে যায়। আজ আমার এক প্রতিবেশী পুলিশ কর্মকর্তার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হয়েছি। গত ৫ দিন ধরে আমরা এলাকাছাড়া।
তিনি জানান, তার প্রতিবেশী দস্তগীর হোসেন মানিক ২০১৭ সালে পুলিশের এসআই পদে যোগদান করেন। বছর দুয়েক আগে তারা দুই ভাইয়ের বসতবাড়ির মাঝের একটি বিরোধপূর্ণ জমি কিনে জোরপূর্বক সেখানে কোটি টাকা ব্যয়ে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। অথচ ওই জমি নিয়ে ২০০৯ সাল হতে মামলা চলছে। এই পুলিশ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে তারা দুই ভাইয়ের বসতভিটা দখলের চেষ্টা করছে। পুলিশের পোশাক পড়ে ওয়াকিটকি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন।
লিখিত বক্তব্যে আজিজুর রহমান বলেন, এসব কারণে তার ভাই শফি ২০২৪ সালের ১৪ মে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে জিডি করেন। এর কিছুদিন পর আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করেন। আদালতের নির্দেশের গত ২০ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়োজিত সার্ভেয়ার জায়গা পরিমাপ করতে গেলে এসআই দস্তগীরের নেতৃত্বে তার ভাইসহ অন্তত ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী আমাদের ওপর ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, চিড়ানো কাঠ, লাঠিসোটা ইত্যাদি নিয়ে হামলা করে।
তিনি বলেন, এতে আমরা গুরুতর আহত হয়েছি। আমার চোখের পাশে ৬টি সেলাই হয়েছে। আমার ভাই শফির মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। আমার মেজ ছেলে মো. বোরহান আজিজকেও তারা বেদম প্রহার করে। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপে মারাত্মক জখম হয়েছে। তার মাথায় ৮টি সেলাই হয়েছে। আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও তারা মারধর করে। আহত অবস্থায় আমরা যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছি। সেই সময় ওই পুলিশ সদস্য প্রভাব খাটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চন্দনাইশ থানায় মামলা করেছেন। আমরা মারও খেলাম। অপরদিকে মামলার আসামিও হলাম। অথচ এই ঘটনায় চন্দনাইশ থানা পুলিশ আমাদের কাছ থেকে মামলা নিয়েছে ঘটনার তিনদিন পর। আমার বড় ছেলে তারেক আজিজ (২৯) বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০১৭ সালে পুলিশের এসআই পদে যোগদান করে আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়ে তিনি কক্সবাজারে হোটেল, বাড়িতে কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, আমাদের বিরোধপূর্ণ জমি দখল করে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এলাকায় শহিদ মিনার, পুকুরের ঘাট, ড্রেন নির্মাণ করে নিজের নামে উদ্বোধন করেছেন। বাড়ির আশপাশে বিপুল পরিমাণ জমি কিনে কোটি টাকার মৎস্য ও কৃষি প্রকল্প করেছেন। তিনি কত টাকা বেতন পান। এত সম্পদ কিভাবে অর্জন করেছেন। অথচ তার পিতার মৃত্যুর আগে এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে তাকে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের লোকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- মোহাম্মদ শফি, মোহাম্মদ নাছির, মোহাম্মদ শিফাত, জোহরা বেগম, শিফা, শাহীন আকতার, শাফিন আকতার, ছেনোয়ারা বেগম।
এসআই দস্তগীর হোসেন মানিক যুগান্তরকে বলেন, তাদের এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমার কেনা জায়গাতে আমি বাড়ি করেছি। তারা এখানে এসে আমাকে হয়রানি করছে। তারা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে। আমরাও মামলা করেছি। তারাও কাউন্টার মামলা করেছে থানায়। তাদের করা মামলায় আমরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছি।