ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে গ্রাহকের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন মো. মুতুর্জা আলী নামে একজন গ্রাহক। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন মামলাটির বাদি মো. মুতুর্জা আলী নিজেই। তিনি ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক।
মামলায় আসামিরা
হচ্ছেন-ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির এমডি আলী রেজা ইফতেখার, পরিচালক এম গাজিউল হক, সেলিনা
আলি, আনিস আহমেদ, মুফাক্কারুল ইসলাম খসরু, গাজী মো. সাখাওয়াত হোসাইন, কেজেএস বানু,
জারা নামরীন, ড. তাওফিক আহমেদ চৌধুরী, রুসলান নাসির, কেএম তানজিব উল হক, খন্দকার আতিক-ই
রাব্বানী, মাহরীন নাসির, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন, সহকারী ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মেহেদী জামান, রিয়াদ মাহমুদ চৌধুরী, এম খোরশেদ আনোয়ার, মাহমুদুন নবী চৌধুরী,
এম খোরশেদ আলম, মহিউদ্দিন আহমদ, ইউনিট হেড মো. ওবাইদুল ইসলাম, মাহদিয়ার রহমান, মাইনুল
হাসান ফয়সাল, ট্রানজেকশন ব্যাংকিং হেড মো. জাবেদুল আলম ও হেড অব কর্পোরেট বিজনেস সঞ্জয়
দাশ।
বাদীপক্ষের
আইনজীবী হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম যুগান্তরকে জানান, ‘ব্যবসায়ী মুর্তুজা আলীর সঞ্চয়ী
হিসাব ও এফডিআরসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ব্যাংকের পরিচালনাপর্ষদসহ উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন নামে এবং ভিন্ন
ভিন্ন মোবাইল নম্বর দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলে। সেই ব্যাংক হিসাবগুলো ব্যবহার করে বাদী বিদেশে থাকা অবস্থায় তারা এফডির
বিপরীতে ঋণ নেয়। যা বাদী জানতেন না। এফডিআরের লাভসহ সর্বমোট ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের
অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তাই মামলার আবেদন করা
হয়েছে। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে সিআইডিকে
তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
এজাহার বলা
হয়েছে, ২০১৭ সালে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক ও আর নিজাম শাখায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়ী
হিসেবে জমা করেন। কিন্তু ব্যাংকের নিয়মনুযায়ী সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর ৭ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার
কথা থাকলেও ব্যাংক তা দেয়নি। পরে ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ মুনাফাসহ ৬ কোটি ১০ লাখ
টাকা দাঁড়ালের মুর্তুজা আলী সেই অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় স্থানান্তর
করেন।
২০১৭ ও ২০১৮
সালে মর্তুজা আলী ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি এফডিআর
(স্থায়ী আমানত) খোলেন এবং এর বিপরীতে একটি ওএসডি (সিকিউরড ওভারড্রাফট) ঋণের জন্য আবেদন
করেন। ২০১৯ সালে বিদেশে থাকার সময় তিনি ব্যাংকটির চান্দগাঁও শাখায় তার নামে দুটি জাল
সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও চারটি ভুয়া ঋণ অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে পারেন। তার জাল স্বাক্ষর
ও ভুল তথ্য দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট দিয়ে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৭ টাকা লেনদেন করে পাঁচ
কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাদী তার সব পাওনা বুঝে পেতে ইস্টার্ন
ব্যাংক বরাবর লিখিত আইনি নোটিশ পাঠালেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
জানায়। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মুর্তুজা আলীর ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে সব মিলিয়ে ১১
কোটি পাওনা বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন।
মুর্তুজা আলী
যুগান্তরকে জানান, ‘জমি বিক্রির টাকা ইস্টার্ন ব্যাংকে রাখলে পুরো টাকায় আত্মসাত করে
ব্যাংকের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ৬ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাংকটির বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্ণা
দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। উলটো আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। এ কারণে আদালতে মামলা
দায়ের করেছি।’