
রাজশাহীতে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বৃদ্ধ আইনজীবী নারীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সিদ্দিকুর রহমান নামের ওই ব্যবসায়ী বাড়ি দখলে রাখার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় থেকে ভাড়াও পরিশোধ করছেন না।
কয়েক দফা সময় নিয়েও তিনি ভাড়া পরিশোধ করেননি। ১৬ লাখ টাকা বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করে বাড়িটির বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসাধনও করেছেন ওই ব্যবসায়ী।
এ ঘটনায় আইনজীবী জেরিনা আখতার লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছেন। বাসা দখলমুক্ত করার জন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
আইনজীবী জেরিনা আখতার গত ৩ ফেব্রুয়ারি আরএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে গত বছরের ২৩ জুন লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। আরএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ, লিগ্যাল নোটিশ এবং উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট বাড়িটি নয় বছর মেয়াদে একটি স্কুল পরিচালনার জন্য ভাড়া নেন ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান।
মহানগরীর পদ্মা পারিজাত আবাসিক এলাকার চারতলা বাড়িটির প্রথম থেকে তিন তলা পর্যন্ত মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৯০ হাজার টাকা। অগ্রিম হিসেবে তিন মাসের ভাড়াও দেন সিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকেই ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। পরের বছর ২৩ জুন নয় মাস পরে তাকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়।
ওই সময় নোটিশে ভাড়াটিয়া সিদ্দিকুর রহমানের কাছে আট লাখ ১০ হাজার টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ভাড়া আদায়ের জন্য নোটিশ দেওয়ার পরেও চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও আট মাস ভাড়া দেননি তিনি। ফলে আরও আট লাখ ১০ হাজার টাকা ভাড়া বকেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এদিকে ভাড়াটিয়া সিদ্দিকুর রহমান গত বছরের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে তার বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে বাড়ির মালিক আইনজীবী জেরিনা আখতারের কাছে লিখিত দিয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; কিন্তু তারপরেও তিনি ভাড়া পরিশোধ করছেন না। বিভিন্নভাবে বাড়ির মালিককে হুমকি দিচ্ছেন।
আরএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, চুক্তি মোতাবেক স্কুলের স্বার্থে বাসাটির সামান্য কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যাবে; কিন্তু সেটি লঙ্ঘন করে সিদ্দিকুর রহমান ইচ্ছামতো ভবনের ওয়াল, দরজা-জানালা, বাথরুম ও রান্নাঘর ভেঙে ক্ষতিসাধন করেন। এছাড়া চারটি সিসি ক্যামেরা ছিল। সেগুলোও খুলে ফেলেছেন। এভাবে তিনি প্রায় সাত লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন।
ভুক্তভোগী আইনজীবী জেরিনা আখতার বলেন, আমার স্বামী ডা. মফিজুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন। আমাদের উভয়ের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। আমার স্বামী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি বিছানাগত। আমিও অসুস্থ। নিজেও চলাফেরা করতে পারি না। আমাদের দুই সন্তান দেশের বাইরে রয়েছে। কষ্টার্জিত উপার্জনের মাধ্যমেই আমরা বাড়িটি তৈরি করেছি। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়েই চিকিৎসা এবং আমাদের পারিবারিক খরচ চলে।
তিনি বলেন, সন্তানরা দেশের বাইরে থাকায় এবং আমাদের স্বামী-স্ত্রীর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সিদ্দিকুর রহমান ভাড়া না দিয়ে বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারছি না। নিরাপত্তহীনতাসহ চরম অসহায়ত্বের মধ্যে রয়েছি। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাইছি।
তবে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঠিকাদারি ব্যবসায় আমার মন্দা যাচ্ছে। এ কারণে ভাড়া দিতে পারিনি। তবে বাড়িটির সংস্কারে আমি অনেক ব্যয় করেছি। বাড়ির ক্ষতিসাধনের অভিযোগ সঠিক না। বাড়িটিতে আমারও অনেক মাল আটকে আছে। টাকা-পয়সা ম্যানেজ হলে আমি ভাড়া দিয়ে বাসাটি ছেড়ে দেব।
এ ব্যাপারে আরএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ এলে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করার জন্য দেওয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছেও পাঠানো হয় প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। সেটা করা হয়েছে কিনা তা দেখে বলতে পারব। এমন অভিযোগ হয়ে থাকলে অবশ্যই পুলিশ তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেবে।